সিরাজগঞ্জে বিতর্কিত ব্যক্তিকে পদে আনতে এমপি পুত্রের প্রশ্রয়ের অভিযোগ

|

এমপি পুত্র সুমগ্ন ও মামুন।

স্টাফ করেসপনডেন্ট, সিরাজগঞ্জ:

একাধিক চাঁদাবাজি, মাদক ও ছিনতাই মামলার আসামীকে শাহজাদপুর পৌর সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক করায় নানা বিতর্কর মূখে কমিটি ঘোষনা করার পরপরই তা স্থগিত করা হয়েছিলো ২০২২ সালে। শাহজাদপুরের এমপি পুত্রের প্রশ্রয়ে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সে  কমিটিতে স্থান পেয়েছিলেন মামুনুর রশিদ মামুন। তবে, দীর্ঘ আট মাস পর আবারও এমপির তদবিরে সে কমিটি বহাল রাখার গুঞ্জন উঠেছে।  অথচ, দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন এ ধরনের ব্যক্তিকে দলে পদ দিলে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। তবে, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা বলছেন, সচ্ছতার ভিত্তিতে কমিটি গঠন করা সঠিক হলেও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও এমপির চাপে তা সব সময় হয় না। 

এর আগে, ২০২২ সালে জুলাই মাসে ৩১ তারিখে সিরাজগঞ্জ জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের প্যাডে শাহজাদপুর পৌর সেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা কর হয়। এতে সভাপতি পদে মিজানুর রহমান মজনু ও মামুনুর রশিদ মামুনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩ বছরের জন্য কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্ত, উক্ত কমিটি ঘোষণার পরপরই বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুনের বিরুদ্ধে নানা তথ্য বেরিয়ে আসে। বিভিন্ন থানায় তার নামে চাঁদাবাজি, মাদক ও ছিনতাই মামলা থাকায় এ সময় কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুসারে সেদিনই ওই কমিটি স্থগিত করা হয়।

শাহজাদপুর পৌর কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সে সময় স্থানীয় এমপি মেরিনা জাহান কবিতা ও তার ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চয়ন ইসলামের সাথে জেলা কমিটি সমন্বয় করে কমিটি ঘোষণা করেন বলে দাবি করেছেন জেলার নেতৃবৃন্দ।

জানা গেছে, অভিযুক্ত মামুনুর রশিদ মামুনের বিরুদ্ধে ২০১৫  সালে শাহজাদপুর থানায় ছিনতাই মামলা, ২০১৯ সালে মাদক মামলা, ২০২০ ও ২০২২ সালে দুইটি ছিনতাই মামলা দায়ের হয়। এমনকি, ২০১৯ সালে ২০ পিস ইয়াবাসহ তিনি ধরা পড়েন বলে জানা যায়।

এদিকে, সম্প্রতি স্থগিত করা এ কমিটি আবারও গঠনের কথা উঠেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এমপির পক্ষ থেকে তার আসনের এ কমিটির জন্য চাপ আছে। এমনকি পুরাতন কমিটি অপরিবর্তিত রেখে স্থগিতাদেশ তুলে নেয়ার সুপারিশও রয়েছে।এমন অবস্থায় শাহাজাদপুর উপজেলার নেতাকর্মীরা এমন বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠনের আর্জি জানিয়েছেন উপজেলা সেচ্ছাসেবকলীগের নেতাদের কাছে।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এমপি পুত্র সুমগ্ন করিমের সাথে ভাল সম্পর্ক থাকায় এখন মামুনকে রেখেই কমিটি গঠনের পাঁয়তারা চলছে।হঠাৎ করেই এমপির ছেলের কারনে মামুনকে নেতা বানানো হয়েছিলো।

এ ব্যাপারে উপজেলা সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মারুফ হোসেন সুনাম বলেন, পৌর কমিটি গঠনের ব্যাপারে জেলা সিদ্ধান্ত নিবে। আমাদের সাথে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে এর আগের কমিটিতে মামুনের বিষয়ে অভিযোগ থাকায় সেই কমিটি স্থগিত করা হয়েছিলো। আমরা চাই প্রকৃত কর্মীরাই যেনো নেতা হন। কোনো নেতার আস্থাভাজন বা জামায়াত-বিএনপির কেউ যেনো পদ না পায়।

এদিকে, সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও এমপি পুত্র সুমগ্ন করিম বলেন, সেচ্ছাসেবক লীগের কমিটির ব্যাপারে জেলা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে আমার কিছু বলার নেই। আর, অভিযুক্ত মামুনের বিরুদ্ধে মামলা কয়েকটি শেষ হয়েছে । এখানে দলের সিদ্ধান্তই সব।

অভিযুক্ত মামুনুর রশিদ মামুন জানান, আমার নামে মামলা থাকার কারণে তখন কমিটি স্থগিত করা হয়েছিল। এ বিষয়ে স্থানীয় এমপির সাথে আমার কথা হয়েছে। এমপি বলেছেন, নির্বাচনের পরে এই কমিটি গঠন করতে হবে। তখন কমিটি গঠন হলে আর কোনো বিতর্ক থাকবে না। এ বিষয়ে এ মাসের ১১ তারিখে এমপি এলাকায় আসলে বাকি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

মামলার বিষয়ে মামুন জানান, আমার বিরুদ্ধে ৪টি মামলার মধ্যে ৩টি মামলাই শেষ হয়েছে। একটি মামলা চলমান আছে।

এদিকে, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমুল হুদা টিটো জানান, ২০২২ সালে এমপির বাসায় তাদের দেয়া নাম থেকেই এ দুইজনকে দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। পরে কেন্দ্র থেকে মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হলে কমিটি স্থগিত করা হয়। এদিকে আসন্ন নির্বাচনের কারণে স্থানীয় এমপি এ কমিটির ব্যাপারে তাগিদ দেন। তার সঙ্গে কমিটি স্থগিতের বিষযেও অলোচনা হয়েছে। কমিটি গঠনের বিষয়ে অচিরেই সিন্ধান্ত নেয়া হবে। যোগ্যতার ভিত্তিতেই এবার সিন্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply