বিস্ফোরণের সংবাদ অনেক আকর্ষণীয় শিরোনামে পৌঁছায় পাঠকদের কাছে। কিন্তু একটি বিস্ফোরণের ফলে যে ক্ষতি হয় সেটির ফলাফল একজন মানুষের পরিবার আজীবন বয়ে বেড়ায়। বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্টি হয় মানবেতর অবস্থা। আর সেই বিস্ফোরণ যদি কোনো ভবনে হয় সেক্ষেত্রে ক্ষতির মাত্রা থাকে অপূরণীয়।
ভবনে বিস্ফোরণ নানা কারণে হয়ে থাকে। যখন একটি বিস্ফোরণ ঘটে তখন বুঝতে হবে বড় ধরনের কোনো ভুল হয়েছে। আর সেই ভুলের ফলেই ঘটেছে বিস্ফোরণ। নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের ফলাফল হলো বিস্ফোরণ। এর মধ্যে দাহ্য পদার্থ সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা, দাহ্য পদার্থে আগুন লেগে যাওয়া ও গ্যাস লিকেজ অন্যতম।
বিস্ফোরণ রাসায়নিক পদার্থ, গ্যাস লিকেজ বা ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট যে কারণেই হোক না কেন তার জন্য মূলত অব্যবস্থাপনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিস্ফোরণের পর তদন্তে নেমে তদন্তকারীরা একটি কারণ খুঁজে বের করেন। আর সেই কারণটি আরও তলিয়ে দেখলে দেখা যায়, অব্যবস্থাপনার জন্যই ঘটে এসব দুর্ঘটনা। আমাদের অবহেলার কারণেই এতো বড় একটি ক্ষতির কারণ ধীরে ধীরে সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বদ্ধ গ্যাস থেকে ভবনগুলোতে বিস্ফোরণ-অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে। মূলত ‘অক্সিজেন, দাহ্য পদার্থ এবং তাপ’ এই তিনটির সমন্বয়ে একসাথে ঘটছে ভয়ানক বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। অনেক সময় বাথরুমের পাইপ দিয়েও মিথেন গ্যাস আসতে পারে। এলপি গ্যাস দীর্ঘদিন ধরে জমতে জমতে বিস্ফোরক সৃষ্টি হয়। সেখানে যখন সামান্য আগুনের স্পার্ক হয় সেটি সামান্য পরিমাণ হলেও বড় ধরনের একটি বিস্ফোরণের সৃষ্টি করে। এবং এই বিস্ফোরণ এতোটা মারাত্মক হয় যে, নিমিষে একটি ভবন ধ্বংস করতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখি ঘরে থাকা এসি বিস্ফোরণের কারণেও ভবনে বড় ধরনের ক্ষতি হয়। সাধারণত ঘরে থাকা এসির কনডেনসারে ময়লা থাকলে কম্প্রেসরে হাই টেম্পারেচার ও হাই প্রেশার তৈরি হয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এসির ভেতরের পাইপের কোথাও ব্লকেজ হলে এসির ভেতরে হাই প্রেশার তৈরি হয়ে কম্প্রেসর ব্লাস্ট হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভবনে বা কক্ষে বিস্ফোরণ সাধারণ গ্যাস থেকে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। কোনো না কোনোভাবে গ্যাসের লিকেজ থাকে। সেই গ্যাস যখন বদ্ধ অবস্থায় থাকে তখনই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসব ক্ষেত্রে কখনো কখনো ন্যাচারাল গ্যাস আবার মিথেন গ্যাসের উপস্থিতিও পাওয়া যায়। এর বাইরেও বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, পুরোনো গ্যাসের লাইন বা নানা ধরনের দাহ্য পদার্থ থেকেও বিস্ফোরণ বা আগুনের সূত্রপাত ঘটে থাকে।
ভবনে বা বাসা-বাড়িতে গ্যাসের লাইনগুলো সাধারণত নিয়মিত চেক করা হয় না। এগুলো থেকে অনেক সময় গ্যাস নিঃসৃত হয় এবং সেটি বদ্ধ বাসা বা কক্ষ হলে ভেতরে জমাটবদ্ধ হয়ে থাকে। যখনই বৈদ্যুতিক সুইচ চালু বা দিয়াশলাই জ্বালানো হয় তখনই সেটি বোমার মতো বিস্ফোরিত হয় এবং আগুন ধরে যায়।
ভবন নির্মাণে ত্রুটির কারণেও অনেক সময় ভবনে বিস্ফোরণ হতে পারে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। ত্রুটিপূর্ণ অবকাঠামোর জন্য অনেক সময় ভবনে বিস্ফোরণ হয়। গ্যাসের লাইন ঠিক ভাবে স্থাপন করে ভবন নির্মাণ করলে অনেক সময় সেটি দেখা শোনা করা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্যাস জমে জমে বিস্ফোরক তৈরি হয়। ভবন নির্মাণের সময় যদি সঠিকভাবে সেখানে বাতাস নির্গতের ব্যবস্থা থাকে সেক্ষেত্রে বিস্ফোরক সৃষ্টি থেকে অনেকটা রক্ষা পাওয়া যায়।
সবশেষ সবার আগে প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা। আমরা নিজেরা সামান্য আলসেমির জন্য অনেক ছোট ছোট সমস্যা এড়িয়ে যায়। আর কিছুদিন পরে ছোট ছোট এই সমস্যা থেকেই সৃষ্টি হয় বড় ধরনের ক্ষতি। প্রাথমিক পর্যায় থেকেই যদি আমরা সচেতনতা অবলম্বন করি তাহলে অনেক ধরনের ক্ষতি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
তথ্যসূত্র: নিলফিক্স, দ্য হার্ট ল ফার্ম
/এনএএস
Leave a reply