নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পর নাজমুল হোসেন শান্ত’র ঝড়ো ফিফটি ও সাকিব আল হাসানের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে ইংলিশ বধের স্বাদ পেলো টাইগাররা। বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৩ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে সাকিব বাহিনী। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ইংলিশ ১৫৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দুই ওভার বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
টস জিতে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে ইংলিশদের দারুণ শুরু এনে দেন দুই ওপেনার জস বাটলার ও ফিল সল্ট। প্রথম পাওয়ার প্লেতে এ দু’জনের জুটি থেকে আসে ৫১ রান।
নাসুম আহমেদের বলে সল্ট বিদায় নিলে ৮০ রানে ভাঙে এই জুটি। আউট হওয়ার আগে ৪টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৩৫ বলে ৩৮ রান করেন সল্ট। আট রানের ব্যবধানে আবারও উইকেট তুলে নেন সাকিব। মালানকে ৪ রানে ফেরান তিনি। ৭ বলে ৪ রান করে শান্তর হাতে তালুবন্দি হয়ে আউট হন মালান।
অন্যপ্রান্তে, একাই লড়াই চালিয়ে যান বাটলার। বাংলাদেশি বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে একের পর এক চার ছক্কার ফুলঝুরি ছড়াতে থাকেন এই ইংলিশ অধিনায়ক। ৪২ বলে ৪টি চার ও ৪টি ছক্কার সাহায্যে ৬৭ রানে হাসান মাহমুদের বলে ক্যাচ আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন বাটলার।
বাটলারের আউটের পরেই ধস নামে ইংলিশ ব্যাটিং লাইন আপে। দলীয় ১৩৫ রানের মধ্যেই বাটলারের পর ডাকেটও আউট হলে ম্যাচে ফিরে টাইগাররা। ডাকেটকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর বাংলাদেশি বোলারদের চমৎকার ডেথ বোলিংয়ে কোনো ব্যাটারই সুবিধা করতে পারেননি। যার ফলে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রানেই থামে ইংলিশদের ইনিংস। শেষ ২৭ বলে কোনো বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেনি সফরকারীরা। টাইগার বোলারদের সেজন্য কৃতিত্ব দিতেই হয়। বিশেষ করে ওয়ানডে সিরিজ ডাগ আউটে বসে কাটানো হাসান মাহমুদ সুযোগ পেয়েই নিজেকে সম্পূর্ণ উজাড় করে দিয়েছেন। নিজের প্রথম দুই ওভারে ১৯ রান দিলেও শেষ দুই ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ২টি উইকেট। টাইগার অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও সাকিব, মোস্তাফিজ, তাসকিন এবং নাসুম প্রত্যেকেই নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
ইংলিশদের দেয়া ১৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা পায় বাংলাদেশ। রনি ও লিটন দাসের ওপেনিং জুটিতে ৩৩ রান আসে মাত্র ৩ দশমিক ৩ ওভারে। আদিল রশিদের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৪ বলে ২১ রানের একটি ক্যামিও ইনিংস খেলেন রনি তালুকদার। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১০ রান যোগ করতেই ব্যক্তিগত ১২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন লিটন। আর্চারের বলে ডাউন দ্যা উইকেটে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্রিস ওকসের হাতে ধরা পড়েন লিটন।
তবে রানের চাকা সচল রাখেন শান্ত ও অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা তৌহিদ হৃদয়। বাংলাদেশ ইনিংসের ৭ম ওভারে বল করতে আসেন মার্ক উড। তাকে ৪ বলে টানা ৪টি চার হাঁকান সদ্য শেষ হওয়া বিপিএলের সেরা শান্ত। ৫৫ রানের দুর্দান্ত জুটিতে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেন এই ব্যাটার।
দলীয় ১০৮ রানে মঈন আলীর বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তৌদিহ হৃদয়। তার আগে ১৭ বলে ২৪ রান করে রানের চাকা সচল রাখার কাজটি ভালোভাবেই করেন। বাংলাদেশের ইনিংসের একমাত্র ছক্কাটিও হাঁকিয়েছেন তিনি। হৃদয়ের বিদায়ের পর স্কোরবোর্ডে আর ৪ রান যুক্ত হতেই সাজঘরে ফেরেন শান্ত। ৩০ বলে ৫১ রানের ইনিংসটিই বাংলাদেশের জয়ের পথে সবচেয়ে বড় ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। হয়েছেন ম্যাচ সেরাও। এদিন ১৭০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে যেন সমালোচকদেরও জবাব দিলেন ছন্দে থাকা এই ব্যাটার। ম্যাচের বাকি কাজটুকু সারেন সাকিব আল হাসান ও আফিফ হোসেন। ৬ চারের সাহায্যে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন দলপতি। অন্যদিকে, আফিফ অপরাজিত থাকেন ১৫ রানে। শেষ পর্যন্ত ১২ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় টাইগাররা।
/আরআইএম
Leave a reply