ইংল্যান্ড সরকারের অভিবাসন নীতিকে জার্মানির নাৎসি সরকারের সাথে তুলনা করেছেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার ও বিবিসি উপস্থাপক গ্যারি লিনেকার। এতে ইংলিশ গণমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাওয়ার পর বিখ্যাত ফুটবল বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘ম্যাচ অফ দ্য ডে’র উপস্থাপক ও বিশ্লেষকের আসন থেকে লিনেকারকে সরিয়ে দিয়েছিল বিবিসি। এর ফলশ্রুতিতে বন্ধই হয়ে যায় অনুষ্ঠানটি। বাধ্য হয়েই আবারও লিনেকারকে ফিরিয়ে আনার পথ খুঁজছে বিবিসি। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
ইংল্যান্ড সরকারের আশ্রয় নীতি নিয়ে টুইট করায় ইংলিশ গণমাধ্যমের শিরোনাম জুড়ে গত দিন কয়েক ধরেই আছেন গ্যারি লিনেকার। ৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন ফলোয়ার্সের টুইট অ্যাকাউন্টে কিছুদিন আগে লিনেকার জানিয়েছিলেন, যেভাবে শরণার্থীদেরকে তাড়িয়ে দিচ্ছে ইংল্যান্ড সরকার, তা এক দুর্বল সরকারের নিষ্ঠুর নীতির দিকে ইঙ্গিত করছে। শুধু তাই নয়, তিনি ইংল্যান্ড সরকারের এই নীতিকে ১৯৩০ সালে জার্মানির নাৎসি সরকারের বৈরিতার সাথেও তুলনা করেন। এরপরেই শুরু হয় তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা।
সরকার দলীয়রা জানাচ্ছেন, লিনেকারের এমন তুলনা করাটা একেবারেই ঠিক হয়নি। বিষয়টি আক্রমণাত্মক ও ক্ষমার অযোগ্য। আবার সরকার বিরোধীদের মত, একজন সাধারণ জনগণ হিসেবে লিনেকারের মত প্রকাশের অধিকার আছে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট জয়ী লিনেকারের এই মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি বিবিসি। চ্যানেলটির জনপ্রিয় শো ‘ম্যাচ অফ দ্য ডে’র সঞ্চালকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় লিনেকারকে। এ ঘটনার প্রতিবাদে মুহূর্তের মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ইংলিশ ফুটবল। বিবিসির অনুষ্ঠান থেকে সরে দাঁড়ান ইয়ান রাইট ও অ্যালান শিয়ারারের মতো ফুটবল–বিশ্লেষকেরা।
সেই সাথে, পেশাদার ফুটবলারদের সংগঠন পিএফএ জানায়, ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়রা বিবিসিকে কোনো সাক্ষাৎকার দেবেন না। আর এর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ‘ম্যাচ অব দ্য ডে’ প্রোগ্রামেও। উপস্থাপক ও বিশ্লেষকরা এই অনুষ্ঠান চালিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় শেষ পর্যন্ত খেলার ভিডিও ফুটেজ দিয়েই চালাতে হয় অনুষ্ঠানটি। শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানের সময়সীমাও নেমে আসে ২০ মিনিটে।
বিসিবির এমন সিদ্ধান্তর পর লিনেকার জানান, মোটেও অনুতপ্ত নন তিনি। একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে মত প্রকাশ করেছেন বলে মনে করেন তিনি। লিনেকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থ, সহকর্মী থেকে শুরু করে ইংলিশ লিগের খ্যাতনামা ব্যক্তিরা। লিভারপুল কোচ ইয়্যুর্গেন ক্লপ বলেন, আমি খুবই অবাক হয়েছি, লিনেকারকে অনুষ্ঠানটি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়ছে শুনে। বিবিসির এমন সিদ্ধান্ত নেয়াটা ঠিক হয়নি। সাধারণ মানুষ হিসেবে তার মত প্রকাশের অধিকার অবশ্যই আছে। তবে আমরা এমন একটি পৃথিবীতে বাস করছি, যেখানে আপনার নিজের অবস্থান বুঝতে হবে এবং কোনো মন্তব্যের শব্দ বিচারে আরও বেশি সচেতন হওয়া জরুরি।
লিনেকারকে সরিয়ে দেবার সিদ্ধান্তটা হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়িয়েছে বিবিসির জন্য। লিনেকারের সহকর্মীরাও তাকে ছাড়া অনুষ্ঠানটি বয়কট করে। যার ফলে এই শো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে বিবিসি। আর, এরপরেই টনক নড়েছে বিবিসির। তাই আবার লিনেকারকে ফিরিয়ে আনার পথ খুঁজছে তারা। বিবিসি ডিরেক্টর টিম ডেভি জানিয়েছেন, এ ধরনের মন্তব্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিয়ে তারা নতুন করে বসবে লিনেকারের সাথে। তিনি বলেন, সবাই আন্তরিকভাবে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। গ্যারি লিনেকার যে এ কাজের জন্য সেরা ব্যক্তি, তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
/এম ই
Leave a reply