ডলারের প্রবাহ বেড়েছে; আমদানিতে ফেরেনি স্বাভাবিক অবস্থা

|

আলমগীর হোসেন:

ডলারের প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু আমদানিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরেনি। ব্যাংকগুলো ঋণপত্র খুলতে সময় নিচ্ছে। ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও লেনদেন স্বাভাবিক হয়নি। ডলার সংকট কাটতে অন্তত বছরখানেক সময় লাগবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এলসি খোলার পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে।

রফতানি এবং প্রবাসী আয়ে ভর করে কিছুটা বেড়েছে ডলার সরবরাহ। ফলে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে ব্যাংকগুলোর ধারণ সীমাও। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে জুলাই-থেকে জানুয়ারি সাত মাসে রফতানি হয়েছে ৩ হাজার ২শ’ ৪৫ কোটি ডলারের পণ্য। এ সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় সাড়ে ১২শ’ কোটি ডলার। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কড়াকড়িতে এ সময়ে আমদানি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

তবে এখন নিত্যপণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে সংকট নেই বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, আমাদের পলিসি অনুযায়ী যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে বাজারে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আমরা আশা করছি, এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই সবকিছু স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসা সম্ভব।

যদিও ব্যাংকার ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলার সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু আমদানিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরেনি। ব্যাংকগুলো ঋণপত্র খুলতে সময় নিচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে শিল্প উৎপাদনে। এমসিসিআই’র সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০ থেকে ৫০ শতাংশ মার্জিন করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংককে তাৎক্ষণিকভাবে এলসি খুলে দিতে হবে। কারো সমতুল্য পরিমাণ ডলার আছে কিনা, সেই ডলারের উপর ভিত্তি করেই লেটার অব ক্রেডিট খোলা হচ্ছে। অর্থাৎ, এটা আমাকে বলতেই হচ্ছে যে, লেটার অব ক্রেডিট খোলার জন্য সময় লাগছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দুই-একটা ব্যাংক বাদ দিয়ে সঠিক সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধের জন্য সবাই এখন আমরা চেষ্টা করছি। যেরকম এলসি খোলা দরকার ছিল সেরকমটা পারছি না। কারণ, সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা এখনও আসেনি। তবে, এখন অবস্থার উন্নতি হয়েছে আগের চেয়ে বেশি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক উদ্যোক্তা এখনও শিল্প উৎপাদনের প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। এ সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে ব্যাংকগুলোর সমন্বয় দরকার। বিআইবিএম’র সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিলাস দ্রব্য বা, যেসব দ্রব্য প্রয়োজনীয় নয় সেসব আমদানি না করা যেতে পারে। তবে এখন তো প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানির ক্ষেত্রেই এলসি খোলা যাচ্ছে না। কাঁচামাল আমদানির জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। কোন ধরনের কাঁচামাল আনা হবে, তার অগ্রাধিকারও ঠিক করতে হবে। সে অনুসারে অনুমতিও দিতে হবে। আবার, এগুলো আনতে না দিলে দেশে মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যাবে। আমদানি করতে হবে। সেক্ষেত্রে আবার ডলারের প্রয়োজন পড়বে। এসব কিছুর মধ্যে একটি সমন্বয় দরকার।

বর্তমান সংকটের জন্য ব্যাংকগুলোও কম দায়ী নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বছর জুড়ে এ সংকট অব্যাহত থাকবে বলেও আশঙ্কা তাদের। ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলোরও যথেষ্ট দুর্বলতা আছে। তারা আগে থেকে ভবিষ্যতে কেমন চাহিদা তৈরি হতে পারে, তার কোনোকিছুরই পরিকল্পনা করেনি।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বৃত্তাকার অর্থনীতির সম্ভাবনা ব্যাপক; বিজনেস সামিটে মত প্রকাশ

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply