বাঘা বাঘা সব শিল্পীদের পেছনে ফেলে ৯৫তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের সেরা মৌলিক গানের পুরস্কার জিতে নিয়েছে ভারতীয় নির্মাতা এসএস রাজামৌলির ‘আরআরআর’ সিনেমার গান ‘নাটু নাটু’। উপনিবেশ-বিরোধী থিম নিয়ে নির্মিত তেলেগু সিনেমার এ গানটি অস্কারের রাতেও মঞ্চ মাতিয়েছে, উচ্ছ্বসিত দর্শকরা জানিয়েছেন ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’। কিন্তু সাড়া জাগানো এ গানের পেছনের গল্প আসলে কী? কেনোই বা শুধু এ গান নিয়েই বিশ্বমঞ্চে এতো হইচই?
বিশ্ব সিনেমঞ্চে এখন ‘নাটু নাটু’র জয়জয়কার। চলচ্চিত্র জগতের সর্বোচ্চ পুরস্কার অস্কারের আগে ‘গোল্ডেন গ্লোব’ ও ‘ক্রিটিক্স চয়েস অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছিল তেলেগু সিনেমা ‘আরআরআর’-এর এই গান। তবে গানের নেপথ্য কাহিনি অনেকেরই অজানা।
তেলুগুতে ‘নাটু’ অর্থ গ্রামীণ বা দেশি। গানের গীতিকার চন্দ্রবোস গ্রাম্য অর্থে এ শব্দের ব্যবহার করেছেন। তার কথায়, ছোটবেলায় গ্রামে বড় হওয়ার যে স্মৃতি, এ গানের নেপথ্যে রয়েছে সেই অনুপ্রেরণা। তবে সংগীত পরিচালক কিরাভানি বলছেন, নাটু অর্থ ‘নিজস্বতা’। গানের তালে বোঝানো হয়েছে, ব্যক্তি যা করে তা একেবারেই তার নিজস্ব। নাটু শব্দের মাধ্যমে নিজের সংস্কৃতিকে বুঝিয়েছেন তিনি।
পিছনে রাজকীয় প্রাসাদ, সামনে সবুজ ঘাসের গালিচা। বিরাট সে বাগানে নাচছেন জুনিয়র এনটিআর ও রামচরণ। রাজকীয় ওই প্রাসাদ দেখে অনেকেরই মনে হয়েছিল, এটি অবশ্যই ভারতের কোনো লোকেশন নয়। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তৈরি বিখ্যাত এ গানের শুটিং হয়েছিল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলদেমির জেলেনস্কির বাসভবনে। যদিও এ মুহূর্তে যুদ্ধ চলছে ইউক্রেনে। তবে যুদ্ধ শুরুর মাত্র ক’দিন আগেই শুটিংয়ের অনুমতি পায় রাজামৌলির টিম। ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রাজনীতিতে আসার আগে ছিলেন পেশাদার অভিনেতা। সে কারণেই এমন জটিল পরিস্থিতিতেও সিনেমার শুটিংয়ের প্রস্তাব ফেরাননি তিনি।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, বিশ্ব এখন ইউক্রেনকে গুরুত্ব দিচ্ছে অনেক বেশি। অস্কার নির্বাচনে এই গানের শুটিং লোকেশন তাই এ পুরস্কারকে বেশ প্রভাবিত করেছে। তবে চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত সমালোচক-বোদ্ধারা বলছেন, নাটু নাটু-র সাফল্যের পেছনে আসলে একটা বা দুটো ফ্যাক্টর নয়– গোটা প্যাকেজটাই বাজিমাত করেছে।
ছন্দের দিক থেকেও বেশ আলাদা ‘নাটু নাটু’। ভাষা না বুঝেও এ গানের তালে নেচে উঠেছেন বিশ্ববাসী। তবে সাফল্যের মূল চাবি আসলে রসায়নে। পরিচালক রাজামৌলির সঙ্গে এনটিআর ও রামচরণের মেলনবন্ধন সবকিছুকে সম্ভব করেছে। গানটির কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। ৯০ শতাংশ কাজ প্রথম দুদিনেই হয়ে যায়, কিন্তু বাকিটা শেষ করতে লাগে উনিশ মাস! কিয়েভ ক্যাসলে শ্যুটিংয়ের ঠিক আগেও বদলানো হয় গানের একটি অংশ। সেদিন নাচের দৃশ্যে আঠারো বার টেক নেয়া হয়, শেষ পর্যন্ত এডিটিং টেবিলে রাখা হয় দ্বিতীয় টেকটিই। বাকিটা, যাকে বলে ইতিহাস।
‘আরআরআর’ সিনেমা নিয়ে বহুদিন ধরেই পরিকল্পনামাফিক প্রচার চালাচ্ছিলেন রাজামৌলি। দেশপ্রেমের সঙ্গে এ গানের শেকড়ের সম্পর্ক, হলিউডে ব্যাপক আকারে মিডিয়া কভারেজ, ‘নাটু নাটু’ অস্কার জিতেছে এমন অনেক কারণেই। ভারতীয় সিনেমা মানে যে শুধুই বলিউড নয়, বরং তামিল-তেলুগু-কন্নড় ভাষাতেও যে ভাল বিনোদনধর্মী কাজ হয় –‘নাটু নাটু’-র অস্কার সেটাও বাকি দুনিয়াকে জানাবে, এমন আশা ব্যক্ত করেছেন চলচ্চিত্র বোদ্ধা ও তারকারা।
/এসএইচ
Leave a reply