কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার আশ্রম থেকে লালন ফকিরের একটি খাতা কলকাতায় নিয়েছিলেন শিলাইদহের তৎকালীন জমিদার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৩৩ বছরের প্রাচীন ও ঐতিহাসিক সেই খাতা উদ্ধার করেন বিশিষ্ট লালন গবেষক শক্তিনাথ ঝা। ৩১৪টি গান লেখা সেই খাতাটি শান্তিনিকেতন থেকে সম্প্রতি আখড়াবাড়িতে ফিরলো অনুলিপি হয়ে। তবে, এতে ক্ষুব্ধ লালন ভক্ত, অনুসারি ও গবেষকরা। তাদের দাবি- মূল খাতাটি যেহেতু গবেষণাযোগ্য পাণ্ডুলিপি, তাই তা সাধুদের আশ্রমে ফেরত দেয়া হোক।
মুখে মুখে পদ রচনা করতেন ফকির লালন সাঁই। তার সেসব কথা সুরের ভূবনে বাধা পড়লেই রূপ নিতো গানে। তাই লালনের মুখনিঃসৃত বানী লিখে রাখতেন তার শিষ্যরা। লালনের জীবদ্দশায়ই ভোলাই শাহসহ তার কয়েকজন শিষ্য গানগুলো লিপিবদ্ধ করার উদ্যোগ নেন। দুটি খাতায় লিখে রাখা হয় ৫শর বেশি গান। বাউল পদাবলীর অনুরাগী হয়ে এরই একটি খাতা নিয়ে যান শিলাইদহের জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এ প্রসঙ্গে লালন গবেষক শক্তিনাথ ঝা বলেন, এই খাতাটা একসময় শান্তি নিকেতনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ এটা ব্যবহার করেছিলেন, তার প্রমাণও আছে। একটা মুন্সেফ রথীলাল দাস নিয়ে গেছে। আরেকটা খাতা রবি ঠাকুর নিয়ে যান। আমি চিঠি দিয়েছি, জানিয়েছি, লোক পাঠিয়ে খবর দিয়েছি- কিন্তু, খাতা ফেরত পাচ্ছি না। সবাই হেসেছে। বলেছে, এরকম কথা না কি অনেকেই বলে। এটা ভোলাই শাহ’র সেই খাতা যেটা আমরা শান্তি নিকেতনে পেয়েছি।
১৩৩ বছর আগে ভোলাই শাহসহ কয়েকজনের হাতে লেখা সেই খাতা ঠাকুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের লালন গবেষক শক্তিনাথ ঝা। শান্তি নিকেতনে খাতাটি জমা দেয়ার পর খাতার একটি অনুলিপি কুষ্টিয়ায় লালন একাডেমিতে দেয়া হয়েছে সম্প্রতি।
লালন গবেষক শক্তিনাথ ঝা আরও বলেন, আমি নীতিগতভাবে মনে করি এখানকার মানুষদের থেকে খাতাটা নিয়ে যাওয়া হয়েছে, খাতাটা এখানেই ফেরত আসুক।
খাতায় ভোলাই শাহসহ অনেকেরই নাম, তারিখ ও সাক্ষর রয়েছে। লালন অনুসারীদের দাবি, হাতে লেখা পাণ্ডুলিপিটি অমূল্য এক প্রামান্য দলিল। তাই অনুলীপি নয়, আসল খাতাটিই ফেরত আসুক।
প্রসঙ্গত, লালনের ভাষায় ‘শিনার ভেদ জানে না সফিন’- অর্থাৎ হৃদয়ের কথা জানে না গ্রন্থ। বাউল সাধকরা বলছেন, গান আর গানের খাতায় লক্ষ্য যোজনের ফারাক। তাই গান থেকে কথা নেয়ার বদলে সুযোগ এসেছে মূল পাণ্ডুলীপি থেকেই বাণী উদ্ধারের।
/এসএইচ
Leave a reply