ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার বেলা ১২টার দিকে তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে, ফেসবুক লাইভে মানহানিকর তথ্য প্রচার করে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানায় মামলাটি করা হয়। মামলায় প্রধান আসামি রকিব সরকার এবং ২ নম্বর আসামি মাহিয়া মাহি।
জিএমপির কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকার হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা, বানোয়াটা, আক্রমণাত্মক, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপরাধ করেছেন। বাসন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ রোকন মিয়া তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি অভিযোগ করেন, তার স্বামী গাজীপুরের ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা রাকিব সরকারের গাড়ির শোরুমে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে স্থানীয় ইসমাইল হোসেন নামে এক ব্যক্তি দাবি করেছেন, জোরপূর্বক দখল করে তার ও মামুন সরকারের জমিতে ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ নামে শোরুম গড়েছেন রাকিব সরকার। ওই জমিতে কাজ করতে গেলে রাকিব সরকারের লোকজনই হামলা চালায়।
এরই মধ্যে, পুলিশের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি ছাড়াও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি সরকার ও তার স্বামী রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে কোটি টাকার জমি দখল ও জমিতে কাজ করতে গেলে বাধা প্রদান ও মারধরের অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করেন স্থানীয় ইসমাইল হোসেন। এ মামলায় মাহি ও তার স্বামী রাকিব সরকারসহ ২৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদী ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উত্তর পাশে তার ও মামুন সরকারের মালিকানাধীন সাড়ে ৩২ শতাংশ জমি রয়েছে। চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির স্বামী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমানে গাজীপুর মহানগরীর বাসন মেট্রো থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাকিব সরকার প্রায় ৫ বছর ধরে জোরপূর্বক দখল করে ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ নামে একটি গাড়ির শোরুম স্থাপন করেছেন। শুক্রবার জমির মালিক মামুন সরকার জমিতে কাজ করতে গেলে রাকিব সরকার নিজস্ব বাহিনীর লোকজন দিয়ে জোরপূর্বক নির্মাণ সামগ্রীসহ লাখ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। ইসমাইল হোসেনের একটি রড বাইন্ডিং মেশিন ভেঙে ফেলে। এ সময় তার লোকজন এসে ইসমাইল হোসেন ও তার লোকজনকে মারধর করে। এতে তিনিসহ আরও ৩ জন আহত হন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে জমি দখল, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজীসহ নানা অপকর্মের ফিরিস্তি লিখিত আকারে তুলে ধরেন। রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ ও অস্ত্র মামলাসহ আরও অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করেন ইসমাইল হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার প্রয়াত পরিবহন শ্রমিক নেতা সামসুদ্দিন সরকারের ছেলে রাকিব সরকার। তার বড় ভাই সুলতান সরকার গাজীপুর জেলা পরিবহন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক, যিনি পরিবহন সেক্টরের বড় চাঁদাবাজ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মূল হোতা হিসেবে পরিচিত। তার আরেক ভাই গাজীপুর মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক ও বিএনপি নেতা এবং স্থানীয় ১৫ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। রাকিব সরকার তার রাজনৈতিক পরিচয় ও ভাইদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, গার্মেন্টস ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, মাদকের স্পট পরিচালনা, জমি দখল, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি, ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় জনগণের কাছে এক আতঙ্কের নাম হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। বর্তমানে সে এসব অপকর্মে তার দ্বিতীয় স্ত্রী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে ব্যবহার করছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, রাকিব সরকার ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের কাশেম টেক্সটাইল সংলগ্ন জনৈক বাবুলের প্রায় ১০০ শতাংশ জমি, বাসন থানার মোগড়খাল এলাকায় বিধবা রহিমার মালিকানাধীন ১০ শতাংশ জমি, সদর থানার শিমুলতলী রোডে ১০ শতাংশ জমি জোড় করে দখল করে নেয়। সে বাসন থানার তেলিপাড়া এলাকার সরকার ক্যাবল ভিশন নামক ডিশ ব্যবসার ম্যানেজার আমির হামজা হত্যার প্রধান আসামি। তার বিরুদ্ধে ইনতুজা আক্তার রুপা নামে এক নারীকে জোর করে ধর্ষণ করলে জয়দেবপুর থানায় মামলা হয়। রাকিব সরকারের এসব অপকর্মের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। উক্ত মন্ত্রীগণ লিখিতভাবে সুপারিশ করার পরও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ইসমাইল হোসেন অবিলম্বে রাকিব সরকারের অত্যাচার থেকে রক্ষা করার জন্য ও জোরপূর্বক দখল করা জায়গা ফিরে পেতে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এর আগে সকালে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির ফেসবুক পেজ থেকে অভিযোগ করা হয়, তার স্বামীর গাড়ির শোরুমে হামলা করা হয়েছে। গাজীপুর মহানগরীর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে সনিরাজ কার প্যালেস নামে তার স্বামীর একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে। স্থানীয় ইসমাইল হোসেন ও মামুন সরকার তার লোকজন নিয়ে শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। হামলাকারীরা শোরুমের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন আসবাবপত্র, দরজা জানালার কাচ এবং টেবিল চেয়ার ভাঙচুর ও শোরুমের সাইনবোর্ড খুলে নেয়। দুর্বৃত্তরা অফিস কক্ষ তছনছ করে এবং টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
মাহিয়া মাহি ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে আমাদের গাড়ির শোরুম দখল করে দিচ্ছে ইসমাইল ওরফে লাদেনকে।
Leave a reply