কোনোদিন ছাত্রলীগের কোনো কমিটিতে নাম ছিল না। অথচ ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ান পুরো গাজীপুর। কিছুদিন আগেও ছিলেন টঙ্গী বাজারের ফুটপাতের মশলা বিক্রেতা। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এখন তিনি কোটিপতি। টঙ্গী এলাকায় বহুতল বাড়ি, একাধিক জমি সবকিছু করেছেন রাতারাতি, বিয়েও দু’টি। তিনি গাজীপুরের কথিত ছাত্রলীগ নেতা আসাদ সিকদার। রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে তার।
গাজীপুরের টঙ্গী বাজারের মশলা পট্টিতেই বেড়ে ওঠেন আসাদ সিকদার। ছোটবেলায় ছিলেন মশলা দোকানের কর্মচারী। পরে ফুটপাতে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে মশলা বিক্রি করতেন। কিন্তু গত দু’বছর হলো এই কাজ বাদ দিয়ে রীতিমতো কোটিপতি তিনি।
মরকুন গুদাড়া ঘাট এলাকায় চারতলা বাড়ির মালিক আসাদ। পাশের ছয় কাঠার দুটি প্লটও তার। একটিতে নতুন বহুতল ভবন তৈরির কাজ শুরু করেছেন এরই মধ্যে। এখানেই শেষ নয়। পাশের পুবাইলের মারকুয়া গ্রামে কিছুদিন আগে বেশ কয়েকটি জমি কিনেছেন আসাদ। তার মধ্যে তিন কাঠার একটি প্লট মাত্র তিন মাস আগে আসাদের কাছে বিক্রি করেছেন মঞ্জুর হোসেন নামের এক ব্যক্তি।
এখন প্রশ্ন, রাতারাতি কী এমন আলাদিনের চেরাগ পেলেন আসাদ, যার ছোঁয়ায় গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ? অভিযোগ আছে, ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে মাদক ব্যবসায় জড়ান তিনি। এলাকার মানুষকে নানাভাবে ফাঁদে ফেলে চাঁদা দাবিসহ হয়রানির অভিযোগও রয়েছে আসাদের বিরুদ্ধে।
তার বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সাদেক আলী জানান, রাজনৈতিক পরিচয়ে মাদকসহ সমাজের নানা কার্যকলাপে জড়ান এই ব্যক্তি। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তিনি বলেন, আমি ওমুকের আন্ডারে আছি, ওমুকের ছত্রছায়ায় আছি।
একই কথা বলেন ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিনও। তিনি বলেন, মাদকসহ আরও নানা কাজে জড়িত আসাদ। তবে রাজনৈতিক কোনো ব্যক্তিত্বেরই প্রশ্রয় পেয়েছে সে।
শুধু তাই না, অস্ত্র ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং লিডারের সাথে তার গভীর সখ্যতাও আছে। নিজেও গড়ে তুলেছেন কিশোর গ্যাং। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের যেনো শেষ নেই। আসাদ যে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় অধিপত্য বিস্তার করেন সেটিও ভুয়া।
গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মশিউর রহমান সরকার বাবু বলেন, ছাত্রলীগের কোনো পোস্টে সে নেই। ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার জন্য ছাত্রত্ব থাকতে হয়, বয়স থাকতে হয়, অবিবাহিত হতে হয়। এর কোনো শর্তই তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
তিনি কোনো ছাত্রলীগ নেতা নন, সে বিষয়টি নিজেই স্বীকার করেন আসাদ। বলেন, টঙ্গী পূর্ব থানার ছাত্রলীগের সাবকে কমিটির কর্মী ছিলেন তিনি। কোনো কমিটিতে তার পোস্ট ছিল না সে কথাও স্পষ্ট জানিয়ে দেন আসাদ।
সব অভিযোগই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, মাদক ব্যবসা কিংবা কিশোর গ্যাংয়ের সাথি জড়িত থাকলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এরই মধ্যে অনেক মাদক ব্যবসায়ীকেই আমরা গ্রেফতার করেছি।
এসজেড/
Leave a reply