নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই নদীতে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব। এক বছর আগে মহানন্দা ও পাগলা নদীর ইজারা দেয়া হয় ২০টি পয়েন্ট। এর মধ্যে ১৮টি পয়েন্টে ইজারার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। অথচ এসব স্থানে এখনো চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। প্রকাশ্যে এমন কর্মকাণ্ড চললেও নিশ্চুপ স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। তবে বালু উত্তোলন বন্ধে নির্দেশনা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলায় ছোট নদী, খাল, জলাশয় পুনঃখনন এবং মহানন্দা নদী ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম প্রকল্পের আওতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা ও পাগলা নদী খনন হয়। ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন কাজ বাস্তবায়ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দুই বছর আগেই শেষ হয় নদী খনন কাজ। সে সময় খননের বালু নদীর দুই পাড়ে ফসলি জমির ওপরেই রাখা হয়। পরে গত বছর এসব বালু ইজারা দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন। ইজারাদাররা ফসলি জমির ওপরে থাকা নদী খননের বালু তুলতে শুরু করেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
মহানন্দা ও পাগলা নদীর কয়েকটি পয়েন্ট ঘুরে দেখা মিলেছে বালু উত্তোলনের মহোৎসবের। সুন্দরপুর ইউনিয়নের কালিনগর মীরের চর এলাকায় পাগলা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে একসাথে চলছে ৪টি এক্সক্যাভেটর (খননযন্ত্র)। এসব বালু ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাচ্ছে চালকরা। নদীর দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করা হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে হুমকিতে পড়েছে পাগলা নদীর ওপর নির্মিত কালিনগর সেতু। এসব বালু ট্রাক্টর দিয়ে পরিবহন করায় নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি ও গ্রামীণ রাস্তা। মুকুলে ভরপুর আমবাগানের ভেতর দিয়ে চলাচল করছে শতাধিক বালু ও মাটি বহনকারী ট্রাক্টর। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে শক্তিশালী একটি চক্র। এ কারণে স্থানীয়রা প্রকাশ্যে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। এই চিত্র দেখা গেছে মিরের চরা, বাগচর ও সোনারপাড়া ঘাট এলাকায়।
বালু উত্তোলনের কাজে তদারকিতে থাকা রবিউল ইসলাম বলেন, কালিনগরের বাবলু এসব খননের বালু উত্তোলন করছেন। তিনি তদারকি করছেন। উত্তোলনকৃত এসব বালু বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, কালিনগর সেতুর পাশে পাগলা নদী থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক্টরে বালু তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অবৈধ ও অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে কলিনগর সেতু ও আশ পাশের ফসলি জমি হুমকিতে পড়েছে। এসব ঘটনা জেনেও অজ্ঞাত কারণে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন।
আবদুল মান্নান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সেতুর পাশে আমাদের দুই বিঘা জমি রয়েছে। এখান থেকে জোর করে মাটি ও বালু কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বাধা দিলে প্রশাসনের ভয় দেখানো হচ্ছে। নদীপাড়ের মাটি কেটে নেয়ায় ফসল চাষ বন্ধ হয়ে গেছে।
আরিফ হোসেন নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, এক বছর থেকে বালু তুলছে প্রভাবশালীরা। এতে হুমকিতে পড়েছে গ্রামের বসত বাড়ি। গ্রামবাসী বাধা দিলেও কর্ণপাত করছে না তারা।
এলাকার অবৈধ বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের প্রধান বাবলু মুঠোফোনে জানান, নদী খননের বালু উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ইজারা দিয়েছে। সাব ঠিকা নিয়ে আমরা বালু উত্তোলন করছি। মেয়াদ শেষে হয়ে গেছে তবে বন্যার কারণে নির্ধারিত সময়ে বালু উত্তোলন করতে পারিনি। তাই উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে বালু তুলছি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন আলী তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি এ বিষয়ে অবগত নই। এ নিয়ে আমি অন রেকর্ড কোনো বক্তব্য দিবো না। আপনার যা খুশি লিখতে পারেন। যদি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের তথ্য দেন তাহলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, নদী খননের বালু উত্তোলনের ইজারা দেয়া হয়েছিল গত বছর। ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়টি জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, ইউএনওকে জানানো হয়েছে। তারপরও যদি বালু উত্তোলন করে সেটা তো আমরা ঠেকাতে পারবো না।
ইউএইচ/
Leave a reply