দুই ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিং ও ভ্লাদিমির পুতিনের মুখোমুখি বৈঠকের ফলাফল আসলে কি? যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো অগ্রগতি হলো কি? এমন হাজারও প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছে; সে সমই মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কারবি বললেন, যুদ্ধ ইস্যুতে চীন নিরপেক্ষ না। সুতরাং, চীনের শান্তি প্রস্তাব আদৌ কিয়েভ বা তাদের পশ্চিমা মিত্ররা মানবে কি না- সেটি নিয়েও চলছে চর্চা। খবর বিবিসির
ইউক্রেন যুদ্ধ কি শেষ হচ্ছে? চীনের প্রেসিডেন্টের মস্কো সফর ঘিরে এটিই এখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত বাক্য। শুধু তাই নয়, উত্থাপিত শান্তি পরিকল্পনা কি যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা মেনে নিবে- সেটি নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। তবে, প্রভাব বিস্তারের দিক থেকে যে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় চলে গেছে এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই কারোরই।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) দুই ক্ষমতাবান রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠক শেষে প্রথম প্রতিক্রিয়া জানায় যুক্তরাষ্ট্র। তাদের অভিযোগ, যুদ্ধ ইস্যুতে নিরপেক্ষ নয় চীন। কারণ, মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় নামলেও; জেলেনস্কির সাথে সংলাপে জাননি শি। তাতেই দেশটির একপেশে আচরণ স্পষ্ট হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কারবি বলেন, শি-পুতিনের যৌথ বিবৃতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে চাই না। তারা বৈঠকে তাদের নিজস্ব মতামত জানাতেই পারেন। কিন্তু, চলমান যুদ্ধে কোনোভাবেই চীনের অবস্থান নিরপেক্ষ নয়। কারণ, আন্তর্জাতিক মঞ্চে রুশ সামরিক অভিযানের কোনো নিন্দা জানায়নি দেশটি। এমনকি, রাশিয়া থেকে জ্বালানী কেনাও বন্ধ করেনি তারা। প্রেসিডেন্ট শি ইউক্রেনে যাননি, জেলেনস্কির সাথে কথাও বলেননি। তার সফরের একমাত্র লক্ষ্য ছিলো, মস্কো।
রাজনৈতিক বোদ্ধারা অবশ্য খুঁটিনাঁটি সবকিছু নিয়েই করছেন, বিচার-বিশ্লেষণ। তাদের বক্তব্য, মার্কিন আধিপত্যবাদের সময় শেষের দিকে সেটাই ইঙ্গিত করে শি’র এ সফর।
এ প্রসঙ্গে রুশ রাজনীতি বিশ্লেষক আলেক্সান্ডার লুকিন বলেন, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের শান্তি পরিকল্পনা খুবই স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত। তার বক্তব্য, পুরো বিশ্বের একটি লক্ষ্য নিয়েই এগুনো উচিত। যেকোন এক প্রান্তের অর্থ-সম্পদ দিয়ে, অন্য অংশ নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিতের এখতিয়ার রাখে না। দীর্ঘদিন রাশিয়া একই কথা বলে আসছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মস্কো-বেইজিংয়ের খরচ দিয়ে ন্যাটো চলতে পারে না। কারণ, আমরা একটি বহুমুখী সমাজে বাস করি, যেখানে সবার অধিকার সমান।
সিঙ্গাপুরিয়ান বডি ল্যাংগুয়েজ এক্সপার্ট কারেন লেওং বলেন, নিঃসন্দেহে শি জিনপিং ক্ষমতাবান রাষ্ট্রপ্রধান। তার ভারিক্কী মেজাজ, স্বল্পভাষী স্বভাব ও হাস্যোজ্জ্বল চেহারা সবাইকে বিভ্রান্ত করে। এবারের বৈঠকে, দুই নেতার আচরণ-করমর্দন বা দাঁড়ানোর ভঙ্গি দেখলেই বোঝা যায়; পরিস্থিতির লাগাম পুরোপুরি চীনের প্রেসিডেন্টের হাতেই ছিল। তিনি যেভাবে পুতিনের দিকে তাকিয়েছেন, সেটা বড় ভাইয়ের শাসনের চাহনি। অন্যদিকে, পুতিন যেনো আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তুতই ছিলেন।
প্রসঙ্গত, দু’দিনের এ সফরে সরাসরি যুদ্ধ বন্ধের কোনো ইঙ্গিত দেননি শি জিনপিং। তবে, বারবারই বাণিজ্যিক ও পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারে দিয়েছেন প্রতিশ্রুতি। ২০২২ সালে, দুদেশের মধ্যে ১৯০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। যা, বিগত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। চীন থেকে ১৩ শতাংশ বেড়েছে রাশিয়ার আমদানি। অন্যদিকে, দেশটিতে ৪৩ শতাংশ রফতানি বাড়িয়েছে পুতিন প্রশাসন।
/এসএইচ
Leave a reply