রিমন রহমান:
পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে কেনার ক্ষমতা হারিয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই কমেছে চাহিদা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করে, গেলোবারের চেয়ে এবারের রোজায় পণ্যের চাহিদা কমেছে অন্তত ২০ ভাগ। ক্রেতারা বলছেন, দামের কারণে কেনাকাটা কম করার বিকল্প নেই। বিক্রেতাদেরও দাবি, বিক্রি কমেছে অর্ধেক। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ডলার ও সুদহারের অব্যবস্থাপনায় বাজারে তৈরি হয়েছে নৈরাজ্য। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও তার সুফল মিলছে না।
দোরগোড়ায় রোজা, তাই বাজারে কিছুটা বেড়েছে ক্রেতার চাপ। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও চাহিদার পুরোটাই কেনাকাটা করা সম্ভব হচ্ছে না ক্রেতাদের জন্য। এ বছর বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। তাই সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। ক্রেতারা জানান। আগে এক হাজার টাকা নিয়ে বাজার করতে গেলে অনেক কিছুই কেনা যেতো। কিন্তু এখন মুরগির দামই ৩৮০ টাকা! তাই যাচাইবাছাই করে কিনতে হচ্ছে। যেখানে মূল্য কম সেখান থেকেই কেনার চেষ্টা করছেন তারা। একজন জানালেন, তার বেতন ১০ হাজার টাকা। আগে খরচ করতেন ৬ হাজার। কিন্তু এখন বেতন আছে আগেরটাই। কিন্তু খরচ বেড়েছে ১০ হাজারেরও বেশি।
মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গেল রোজার চেয়ে এবার পণ্যের চাহিদা কম থাকবে ২০ ভাগ। বাজার বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বলা হচ্ছে, পণ্যের ঘাটতি নেই। কিন্তু দামের কারণে চাহিদায় লাগাম টেনেছে বিপুল সংখ্যক নিম্ন ও মধ্যবিত্ত। দোকানিরাও জানালেন, এরকম সময়ে দোকানে ক্রেতারা ভিড় করতেন। এবার বেঁচাকেনা নেই সেই তুলনায়। আগে মানুষ ছোলা কিনতো ৫-১০ কেজি করে। এখন কিনছে ২-৩ কেজি। ১০ লিটারের তেল কিনতো ক্রেতারা। তারা এখন কিনছে ২-৪ কেজি করে।
আন্তর্জাতিক বাজারে কমছে পণ্যের দাম। কিন্তু অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনায় দাম কমার সুফল মিলছে না। বলা হচ্ছে ডলারের উচ্চমূল্যই এ জন্য দায়ী। অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের মূল্যস্ফীতি যাচ্ছে উল্টোদিকে। ভারত, আমেরিকা, ইউরোপ- পৃথিবীর সব দেশে মূল্যস্ফীতি এখন কমছে। আর আমাদের দেশে যাচ্ছে বাড়ার দিকে। আমাদের কেন বাড়ছে? কারণ, মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুরুও করিনি আমরা। সরকার এখন যা করছে, টাকা ছাপাচ্ছে। এভাবে কি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?
প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালে নেই। সয়াবিন তেল, চিনি, ছোলা, ব্রয়লার মুরগী, ডিম থেকে শুরু করে বেশিরভাগ পণ্যের দামই বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ ভাগ। অতিমুনাফা করার প্রবণতাও ধরা পড়েছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। বাজারে যদি কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়, তাহলে আমরা সেই বাজার কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। প্রয়োজনে ওই বাজার কমিটিকে বাতিল করে দেবো।
ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে বেতন বৃদ্ধির দাবি উঠেছে। একই সঙ্গে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সঠিক ব্যবস্থাপনাও দরকার।
আরও পড়ুন: ব্রয়লার মুরগির যৌক্তিক দাম কার্যকরে চেষ্টা করা হচ্ছে: ভোক্তার মহাপরিচালক
/এম ই
Leave a reply