পাকিস্তানি সামরিক আর রাজনৈতিক নেতৃত্বের যৌথ চক্রান্তের সিদ্ধান্তই ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চলাইট। বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা না দিতেই চালানো হয় ইতিহাসের জঘন্য গণহত্যা। ঐ রাতে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকাতেই হত্যা করা হয় দশ হাজারের বেশি নিরীহ মানুষকে। পাশাপাশি দেশের বেশ কয়েকটি শহরে একযোগে চালানো হয় হত্যাযজ্ঞ। বিশ্বব্যাপী এই নারকীয় গণহত্যার ইতিহাস তুলে ধরতে প্রচারণা চালানোর পরামর্শ গবেষকদের।
৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু আক্রমণ প্রতিহতের প্রস্তুতি রাখার আহ্বান জানান। পাশাপাশি চালিয়ে যান আলোচনাও। কিন্তু পাকিস্তানীদের উদ্দেশ্য ছিল সময়ক্ষেপণ। পশ্চিম থেকে আনা হচ্ছিলো সৈন্য আর গোলাবারুদ। আর ঢাকা পরিণত হয়েছিল বিক্ষোভের নগরীতে।
২৫ মার্চ সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠকের পর পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো সাংবাদিকদের জানান, ‘পরিস্থিতি সঙ্কটজনক’। পরেই ইয়াহিয়া গোপনে বৈঠক করেন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে। চূড়ান্ত করা হয় হামলার নীল নকশা। শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা হেলিকপ্টারে সেনানিবাসগুলো সফর করেন। বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা ও সৈন্যদের রাখা হয় নজরদারিতে। সন্ধ্যায় কোনো ঘোষণা না দিয়ে ঢাকা থেকে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া। রাত দশটায় শহরে ছড়িয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী।
ইতিহাস গবেষক অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, ২৫ মার্চ গণহত্যা চালানোর বিষয়টি অবশ্যই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তারা অনেক আগে থেকেই জানতেন পূর্ববঙ্গ বাংলাদেশ হয়ে যাবে। যেকারণে তারা সকল শিল্প কারখানা তাদের দিকে করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, তারা ক্ষমতা দেবে না। তাদের ধারণা, ১০-১৫ হাজার মানুষ মেরে ফেললে সবাই কাবু হয়ে যাবে।
পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুরান ঢাকায় একযোগে আক্রমণ করে হানাদার বাহিনী। মেতে ওঠে ইতিহাসের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে। ঢাকায় থাকা বিশ্ব গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা তুলে ধরেন সেই বর্বর গণহত্যার কথা। সেই রাতে শুধু ঢাকায় কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল?
এ সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক শাহরিয়ার কবীর বলেন, এক রাতে শুধু ঢাকা শহরেই ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। আর সারাদেশে একরাতে ১ লাখের মতো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গণহত্যার স্বীকৃতি পেতে হলে মূলত আমাদের একটি কূটনৈতিক যুদ্ধ করতে হবে। গণহত্যাকে নিরুৎসাহিত করার এ জন্য এ স্বীকৃতি প্রয়োজন, যেন ভবিষ্যতে এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা না ঘটে।
২০১৭ সাল থেকে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে দেশে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হত্যা, ধর্ষণের ভয়াবহতা বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ।
আক্রমণকারী হানাদারদের একটি দল যায় ধানমন্ডি। গ্রেপ্তারে আগেই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন স্বাধীনতার। নয় মাস যুদ্ধের পর মুক্তি লাভ করে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের নতুন একটি ভূখণ্ড; যার নাম, বাংলাদেশ।
এটিএম/
Leave a reply