তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার, প্রযোজক, পিয়ানো বাদক ও গায়ক। সত্তরের দশক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত নিজের সঙ্গীতের জালে বন্দি করে রেখেছেন বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত-শ্রোতার হৃদয়। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী, সংগীতের আইকন স্যার এলটন জনের জন্মদিন আজ।
তার পুরো নাম স্যার এলটন হারকিউলিস জন, সংক্ষেপে এলটন জন। তবে শৈশবে অবশ্য তার নাম ছিল রেজিনাল্ড কেনেথ ডোয়াইট। যুক্তরাজ্যের মিডলসেক্সের ছোট্ট গ্রাম পিনারে ১৯৪৭ সালের ২৫ মার্চ জন্ম তার। সংগীতের আশীর্বাদ নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি। মাত্র ৩ বছর বয়সে ঘরের পিয়ানোতে ‘দ্য স্কেটারস ওয়ালজে’র সুর তুলেছিলেন। ১১ বছর বয়সে রয়্যাল একাডেমি অব মিউজিক থেকে জুনিয়র বৃত্তি লাভ করেন। ১৭ বছর বয়সেই পড়ালেখার পাট চুকিয়ে বন্ধুদের নিয়ে নিজেদের ব্যান্ড ‘ব্লুসোলজি’ গঠন করেন এলটন। একাকিত্বে পিয়ানোই ছিল তার একমাত্র বন্ধু। পিয়ানোতে খুব সহজেই যে কোনো গান বা সুর তুলে ফেলতে পারতেন।
রক অ্যান্ড রোল থেকে বুগি-উগি, জ্যাজ, ব্লুজ কিংবা ডিস্কো খুব সহজেই বাজিয়ে ফেলতে পারতেন তিনি। এলটন জনের কণ্ঠে ১৯৬৫ সালে ব্লুসোলজির প্রথম গান ‘কামব্যাক বেবি’ মুক্তি পায়। কিন্তু ব্যান্ডের অন্য সদস্যদের সঙ্গে পিয়ানো বাজিয়ে যেন মন ভরছিল না তার।
এরপর, ১৭ বছর বয়সী সাহিত্যপ্রেমী বার্নি তাওপিনের সঙ্গে পরিচয় হয় এলটনের। ১৯৬৭ সাল থেকে এলটনের জন্য গান লেখা শুরু করেন বার্নি। প্রায় ৩০টির ওপর অ্যালবামে একসঙ্গে কাজ করেছেন এ যুগল। ১৯৭১ সালে এলটন ও বার্নি যুগলের ‘টাইনি ডান্সার’, ‘লেভন’ ও ‘মেডম্যান অ্যাক্রস দ্য ওয়াটার’ গানগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শুরু হয় সঙ্গীতজগতে এলটন জনের বিজয়যাত্রা।
অল্প সময়ের মধ্যে পপ তারকার খ্যাতি পান তিনি। অদ্ভুত সব পোশাক গায়ে জড়িয়ে মঞ্চে হাজির হতেন। পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘ফ্লেমবয়েন্ট পারফরমার’ হিসেবে। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর প্রায় একটি করে অ্যালবাম উপহার দিয়েছেন তিনি। মাঝে বয়সের কারণে কিছুদিন বিরতি নিলেও গত বছর পপ কুইন ব্রিটনি স্পিয়ার্সের সাথে নতুন গান নিয়ে ফের হাজির হয়েছেন সঙ্গীত জগতে। তার বায়োপিক ‘রকেটম্যান’ ২০১৯ সালের অন্যতম ব্লকবাস্টার সিনেমা ছিল।
বর্ণাঢ্য সংগীতজীবনে অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন স্যার এলটন জন। ১৯৯৫ সালে সংগীতে অস্কার লাভ করেন। ছয়বার গ্র্যামি, ১২ বার আইভর নোভেলো ও একবার টনি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। ২৪টির ওপর দাতব্য সংস্থার সঙ্গে জড়িত তিনি। সংগীতে ও দাতব্যে তার অসামান্য কীর্তির জন্য ১৯৯৮ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে নাইট উপাধি অর্জন করেন।
পৃথিবীতে খুব অল্প সংখ্যক সঙ্গীতশিল্পী রয়েছেন যারা তাদের সাফল্য ও জনপ্রিয়তা লালন করতে পেরেছেন। গানের জগতে এলটন জন অসামান্য গায়ক হিসেবে বিরাজ করে যাবেন তার অসংখ্য ভক্তের হৃদয়ে। শুভ জন্মদিন এলটন জন।
/এসএইচ
Leave a reply