রিমন রহমান:
৮০০ টাকা ছুঁয়েছে গরুর মাংসের কেজি। ধাপে ধাপে বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে দাম। গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলছে, মুদ্রার মান বিবেচনায় নিলে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দামে গরুর মাংস বিক্রি হয় বাংলাদেশেই। সংশ্লিষ্টদের দাবি, চাহিদার তুলনায় যোগান কম এবং গো-খাদ্যের সংকটে বাড়ছে গরুর দাম। ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হওয়াও সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয়, পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ।
গরুর মাংসের দামবৃদ্ধির এ চক্র একটি ছোট উদাহরণ দিয়ে স্পষ্ট হওয়া যাক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজধানীর গাবতলীর হাটে আনতে গরু প্রতি বাড়তি ব্যয় হয় ১০ হাজার টাকা। গাড়ি ভাড়া, রাখাল, খাবার এবং রাস্তায় চাঁদাবাজিতে ব্যয় হয় এই অর্থ। ঢাকায় এনে বিক্রি না হলে প্রতিদিনই বাড়তে থাকে ব্যয়। গরুর বিক্রির ক্ষেত্রে লাখ টাকায় গাবতলীতে ইজারা বাবদ ব্যয় করতে হয় ৫ হাজার টাকা। এভাবে একটি গরু শহরের ভেতরে তিনটি হাটে স্থানান্তরিত হলেই দাম বেড়ে যায় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ গাবতলীর হাটে আসা গরুপ্রতি বাড়তি ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর প্রভাব সরাসরি এসে পড়ে মাংসের দামের ওপর।
এ নিয়ে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল ইসলাম বলেন, মাংস ব্যবসায়ীদের জন্য আগে ১০০ টাকা খাজনা নির্ধারিত ছিল। সেই খাজনা এখন ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, পশুতে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে এখনও অনেক দেরি।
বর্তমানে রাজধানীর বাজারে এককেজি গরুর মাংসের দাম হাঁকানো হচ্ছে সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। ধাপে ধাপে বাড়ছে দাম। দোকানিরা বলছেন, হাটেই গরুর দাম বেশি, তাই দাম কমানোর সুযোগ নেই।
সরকারের তরফ থেকে বরাবরই দাবি করা হয়, পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। কিন্তু বাজারে চাহিদা এবং যোগানের ফারাক স্পষ্ট। গো খাদ্যের অস্বাভাবিক দামে সংকুচিত হয়েছে অনেক খামার। কয়েক বছর ধরেই গরু রফতানিতে নিয়ন্ত্রণ এনেছে ভারত। অন্যান্য দেশ থেকেও মাংস আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, দামও বাড়ছে।
বিষয়টি নিয়ে মাংস আমদানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকায় বিশ্বে গরুর মাংসের গড় মূল্যের চেয়ে বাংলাদেশে ৩০-৪০ শতাংশ বেশি। আমদানি বন্ধকেও দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
দক্ষিণ এশিয়ায়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে বাংলাদেশে বিক্রি হয় গরুর মাংস। অন্যান্য দেশের তুলনায় কেজিপ্রতি দাম অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমও বললেন একই কথা। সরবরাহ কম এবং উচ্চ ব্যয়ই গরুর মাংসের দাম করেছে লাগাম ছাড়া। শুধু কোরবানি কেন্দ্রিক ফার্মিং না করে সারা বছর যাতে গরু সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় সেদিকে নজর দেয়া দরকার বলেও মনে করেন তিনি। এতে সংকট কিছুটা হলেও কমার সম্ভাবনা থাকে।
এসজেড/
Leave a reply