দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রচারিত একটি সংবাদকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক’ আখ্যা দিয়ে সংবাদটি প্রচারে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ।
শনিবার (১ এপ্রিল) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণমাধ্যম একটি সভ্য সমাজের অন্যতম দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান। সমাজের সঠিক চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরাই গণমাধ্যমের কাজ, আর গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ জনমানসে গভীর প্রভাব বিস্তার করে বলে সংবাদমাধ্যমকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হয়। কিন্তু, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, ‘দৈনিক প্রথম আলো’ পত্রিকা এই নৈতিক দায়িত্ব উপেক্ষা করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। মহান স্বাধীনতা দিবসে তারা এ দেশের স্বাধীনতাকে বিদ্রুপ করে একটি বানোয়াট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা এই ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি।
সম্প্রতি উক্ত পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রেক্ষাপটে একজন শিশুর ছবি এবং সেই ছবির নিচে ক্যাপশনের পরিবর্তে একজন দিনমজুরের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। ক্যাপশনে উল্লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাকে পরিষ্কারভাবে উপহাস করা হয়েছে। একজনের ছবির ক্যাপশনে অন্য আরেকজনের উদ্ধৃতি প্রকাশ গণমাধ্যমের নৈতিকতা পরিপন্থী। তদুপরি, উদ্ধৃতিটির ভাষামান বিবেচনা করলে তা কোনোভাবেই দিনমজুরের বক্তব্য বলে মনে হয় না। বরং এটি ওই দিনমজুরের কণ্ঠে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় বক্তব্য বলেই প্রতীয়মান হয়। অন্য একটি গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে ইতোমধ্যে জানা সম্ভব হয়েছে যে, ওই শিশুকে উৎকোচের বিনিময়ে প্রলুব্ধ করে ছবিটি তোলা হয়েছে। বস্তুত এক্ষেত্রে শিশুটিকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে তার অধিকার ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বানোয়াট ছবি ও বক্তব্যের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার এক কাল্পনিক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে মহান স্বাধীনতাকে যেভাবে বিদ্রুপ করা হয়েছে, সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও নিন্দনীয়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নামে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
পরবর্তীকালে যদিও পত্রিকাটি তাদের ভুল স্বীকার করে প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে, কিন্তু আনুপূর্বিক ঘটনাপ্রবাহ বিবেচনায় এটিকে নিছক একটি ভুল হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বরং এই ঘটনা যে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণের অপতৎরতার অংশ, এরূপ মনে করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। কেননা এ ধরনের প্রতিবেদন জনমনে রাষ্ট্র সম্পর্কে একটি বিরূপ ধারণার জন্ম দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের ঘটনা আমরা আগেও প্রত্যক্ষ করেছি। স্বাধীনতার অব্যবহিতকাল পরে ১৯৭৪ সালে বাসন্তী নামের এক নারীকে জাল পরিয়ে সাজানো ছবি তুলে দুর্ভিক্ষের কাল্পনিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। ‘দৈনিক প্রথম আলো’র তৎপরতা ১৯৭৪-এর ঘটনার ধারাবাহিকতা বলে প্রতীয়মান হয়। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল অনুরূপ ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আলোচ্য পত্রিকাটি গণমাধ্যমের নৈতিকতা জলাঞ্জলি দিয়ে ২০০৭ সালে অনির্বাচিত সামরিক শাসনের পক্ষ নিয়ে বি-রাজনীতিকরণের পক্ষে নির্লজ্জভাবে কলম ধরেছিল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, এই চক্রান্তে বিভ্রান্ত না হয়ে প্রকৃত সত্য অনুধাবন করুন ও প্রয়োজনবোধে তুলে ধরুন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বানোয়াট তথ্য পরিবেশন কোনোক্রমেই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হতে পারে না। দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমরা যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। তবে এ প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ কোনো আইনের যেন অপপ্রয়োগ না হয় সেটিও নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বিবৃতি দেয়া বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে আছেন:
০১। অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, সাবেক চেয়ারম্যান, ইউজিসি
০২। অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক, সাবেক উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
০৩। অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
০৪। অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীর, সাবেক উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশিষ্ট রসায়নবিদ
০৫। অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, সাবেক সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি
০৬। অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, সাবেক উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
০৭। অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, সাবেক প্রো-উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
০৮। অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন, সাবেক প্রো-উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
০৯। অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, উপাচার্য, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
১০। অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহাম্মদ, সাবেক ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১১। অধ্যাপক ড. অহিদুজ্জামান, সাবেক উপাচার্য, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১২। অধ্যাপক এ কে এম সাইদুল হক চৌধুরী, সাবেক উপাচার্য, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৩। অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর, সাবেক উপাচার্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়য়, ময়মনসিংহ
১৪। অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, সাবেক উপাচার্য, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
১৫। অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান আকন্দ, সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
১৬। অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর আলী, সাবেক প্রো-উপাচার্য, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
১৭। অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, সাবেক ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৮। অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন
১৯। অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন
২০। অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূইয়া, সাবেক ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২১। জনাব মোজাম্মেল বাবু, প্রধান সম্পাদক, একাত্তর টেলিভিশন
২২। জনাব নাইমুল ইসলাম খান, এমিরেটাস এডিটর, দৈনিক নতুন সময়
২৩। জনাব মো. মনজুরুল ইসলাম, প্রধান সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ।
২৪। জনাব শ্যামল দত্ত, সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব
২৫। অধ্যাপক চৌধুরী জুলফিকার মতিন, সাবেক অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
২৬। অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশিষ্ট নাট্যকার
২৭। অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম, ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও সভাপতি, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি
২৮। অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র দাশ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশিষ্ট প্রাণিবিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক
২৯। অধ্যাপক ড. অজিত কুমার মজুমদার, বিশিষ্ট পরিসংখ্যানবিদ
৩০। অধ্যাপক ড. এ এ মামুন, বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী
৩১। অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক ডিন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৩২। অধ্যাপক ড. নোমান, সাবেক ডিন, আইন অনুষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৩৩। অধ্যাপক ডাক্তার কামরুল হাসান খান, সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
৩৪। প্রকৌশলী কাজী খায়রুল বাশার, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা কেন্দ্র, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ
৩৫। ইঞ্জিনিয়ার নূরুল হুদা, প্রেসিডেন্ট, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার বাংলাদেশ
৩৬। ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাত হোসেন শিবলু, সাধারণ সম্পাদক, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার বাংলাদেশ
৩৭। ডাক্তার নুজহাত চৌধুরী, সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৮। ডাক্তার মামুন আল মাহতাব, সদস্য সচিব, সম্প্রীতির বাংলাদেশ
৩৯। জনাব পীযুষ বন্দোপাধ্যায়, নাট্যব্যক্তিত্ব ও আহ্বায়ক, সম্প্রীতির বাংলাদেশ
৪০। জনাব তারানা হালিম, নাট্যব্যক্তিত্ব
৪১। জনাব গোলাম কুদ্দুস, সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট
৪২। ডাক্তার এহতেশামুল হক দুলাল, সদস্য-সচিব, প্রকৃচি
৪৩। ডাক্তার জামাল উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক, প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিশনার্স এসোসিয়েশন
৪৪। ডাক্তার মনিরুজ্জামান, সভাপতি, প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিশনার্স এসোসিয়েশন
৪৫। অধ্যাপক ড. মো. হারুনর রশীদ খান, সাবেক উপাচার্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
৪৬। অধ্যাপক ড. এমরান কবীর চৌধুরী, সাবেক উপাচার্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
৪৭। অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ, ডিন, বায়োলোজিক্যাল সায়েন্স, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৪৮। অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব, চেয়ারম্যান, সিইসি বিভাগ এবং সভাপতি শিক্ষক সমিতি, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৪৯। অধ্যাপক ড. কবির হোসেন, সভাপতি, শিক্ষক সমিতি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৫০। অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদার, সাবেক সভাপতি, শিক্ষক সমিতি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
/এম ই
Leave a reply