কী ঘটতে যাচ্ছে ১৫ রমজানে? মহাকাশে এদিন বিকট শব্দ সৃষ্টি হবে, নানা ক্ষয়ক্ষতি হবে এমন গুজব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ নিয়ে বিতর্কেও জড়িয়েছেন অনেকে। তবে ধর্মীয় কিংবা বৈজ্ঞানিক দিক থেকে এ গুজবের সপক্ষে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশে এবারের রমজান শুক্রবার দিয়ে শুরু হওয়ায় এবং ১৫ রমজান শুক্রবার হওয়াকে কেন্দ্র করে গুজবটি ডালপালা মেলে। অনেকেই এর পাল্টা হিসেবে বলছেন, যদি শুক্রবার ১৫ রমজান হওয়ার সাথে এমন কিছুর সংযোগ থাকে তাহলে সৌদি আরবসহ অনেক দেশে শুক্রবার রোজা শুরু হয়নি এবং ১৫ রমজানও শুক্রবার নয়। তাহলে কী এই অলৌকিক ঘটনা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই প্রযোজ্য?
এ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সংস্থা বাংলাদেশের মহাসচিব শায়েখ সাদ সাইফুল্লাহ মাদানী বলেন, কোনো এক ১৫ রমজান শুক্রবার বিকট শব্দ হওয়ার এই হাদীস যাহাবী, উকাইলী, ইবনুল জাওযী, আলবানী, বিন বায প্রমুখ আলিম বা মুহাদ্দিসের মতে জাল বা মনগড়া। এছাড়াও ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ ইসলামি ইতিহাসে যেসব ঘটনা সহীহ নয়, তারমধ্যে এ ঘটনাকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এই সংক্রান্ত গুজব ছড়িয়ে কিছু কিছু মানুষ ভাইরাল হওয়ার চেষ্টা করছেন। নিজেদের মতবাদ কোরআন ও হাদিসের উল্লেখ করে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করছেন। একটি হাদিসের ভুল ও দুর্বল ব্যাখ্যা করে অনেকে এমন গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, কেয়ামতের সবচেয়ে বড় আলামত হলো ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণীর আলোকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা-বিশ্বাস হলো শেষ জমানায় প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদির আবির্ভাব সত্য। ইমাম মাহদি নবী-পরিবার থেকেই হবেন। হাদিসে আছে, হজরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, মাহদি আহলে বাইতের ফাতেমি বংশ থেকেই হবেন। (আবু দাউদ ৪২৮৪)।
ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের আলামতসংক্রান্ত একটি হাদিসের অপব্যাখ্যা করে এই গুজবটি ছড়ানো হচ্ছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো এক রমজানে আওয়াজ আসবে। সাহাবিরা তখন জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! রমজানের শুরুতে নাকি মাঝামাঝি সময়ে? নাকি শেষ দিকে?’ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, না, বরং রমজানের মাঝামাঝি সময়ে। ঠিক মধ্য রমজানের রাতে। শুক্রবার রাতে আকাশ থেকে একটি শব্দ আসবে। সেই শব্দের প্রচণ্ডতায় ৭০ হাজার মানুষ বেহুশ হয়ে যাবে আর ৭০ হাজার বধির হয়ে যাবে।
এই হাদিস সম্পর্কে শায়খ আলবানি (রহ) বলেন, হাদিসটি বানোয়াট। ইবনুল জাওজি তার মাউজুআত তথা বানোয়াট হাদিস সংকলন গ্রন্থে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। (৩/১৯১)। ইমাম জাহাবি বলেন, হাদিসটি বাতিল। (তারতিবুল মাউজুআত: ২৭৮)
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী বলেন, এটি নিছক গুজব। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
একাধিক ইসলামি গবেষক ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখকের সাথে যোগাযোগ করে এই ধরনের ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। সবাই এটিকে গুজব বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন।
Leave a reply