স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুরঃ
তীব্র স্রোতের প্রতিকূলে ড্রেজিং কার্যক্রম চালাতে না পারায় শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌরুটের আলোচিত লৌহজং টার্নিং বন্ধ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ বিকল্প চ্যানেল খুলে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করলেও ওই চ্যানেলটি সরু হওয়ায় উল্টো ঘটছে দুর্ঘটনা।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) বিকল্প চ্যানেলের মুখেই ফেরি রানীক্ষেতের তলা ফেটে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। অন্য ফেরিগুলোও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। সরু চ্যানেলে তীব্র স্রোত আর ডুবোচরের আধিক্যের সাথে এ রুটের মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরির কারণে ঝুঁকি চরম আকার ধারণ করেছে। এদিকে যাত্রীদের রয়েছে ড্রেজিং’র মান নিয়ে প্রশ্ন। এমন পরিস্থিতিতে কোরবানির ঈদে দক্ষিনাঞ্চলগামী যাত্রীদের নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরেই উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌরুটের অচলাবস্থা নিয়মিত কারণ দাড়িয়েছে। এই পয়েন্টে পদ্মা এতটাই খরস্রোত ও ঘূর্নিস্রোত যে একটি ড্রেজারও বসানো যাচ্ছে না। ফলে উজানে ব্যাপক নদী ভাঙ্গনের পলি তীব্র স্রোতের সাথে এসে আরও অবনতি ঘটাচ্ছে।
তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ১৬ জুলাই ৬ কিলোমিটার ভাটিতে ওয়ান ওয়ে বিকল্প চ্যানেল চালু করে বিআইডব্লিউটিএ। নতুন এ চ্যানেলটির নাব্যতা রক্ষায় ৭টি ড্রেজার কাজ করছে। এতে চ্যানেল সরু হয়ে বিপদজনক হয়ে উঠেছে। যার ফলে মঙ্গলবার তলা ফেটে ডুবোচরে ২২টি গাড়ি নিয়ে আটকে পড়ে ডাম্ব ফেরি রানীক্ষেত। ফেরিটিকে রক্ষা করলেও প্রতিনিয়ত রয়েছে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি, পারাপারে লাগছে বাড়তি সময়। এই রুটে ২০টি ফেরি, ৮৭ টি লঞ্চ ও ২ শতাধিক স্পীডবোট সার্বক্ষণিক চলাচল করে।
ট্রাক চালক কবির হোসেন বলেন, আজ পাঁচদিন ধরে পেয়াজ বোঝাই ট্রাক নিয়ে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আটকে রয়েছি। পেয়াজে পচনও শুরু হয়েছে। পকেটের টাকা শেষ হয়ে এখন থাকা-খাওয়াতেও অনেক সমস্যা হচ্ছে।
আরেক চালক হুমায়ুন বলেন, নদীতে চর পড়ার কারনে ফেরি ঠিকমত চলতে পারছে না তাই গত ৪ দিন ধরে ঘাটে আটকে আছি। আবার দেখছি ড্রেজার দিয়ে নদী খননও করা হচ্ছে। ঠিকমত খনন করলেতো চর থাকার কথা না।
ডাম্ব ফেরি রানীক্ষেতের ২য় মাস্টার বলেন, নদীতে ডুবোচরের কারনে আমাদের ফেরির তলা ফেটে গিয়েছিল। মেয়াদোত্তীর্ণ যে সকল ফেরি রয়েছে সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোন সময় এগুলোর তলা ফেটে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আসন্ন ঈদ মৌসুম নিয়ে আমরাও চিন্তিত। তবে ড্রের্জি কার্যক্রম যদি দ্রুত শেষ করে চ্যানেল ঠিক করা হয় তাহলে সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে।
রোরো ফেরি শাহ মখদুমের মাস্টার ইনচার্জ আল আমিন বলেন, নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে পলি পড়ে ডুবোচর সৃষ্ঠি হয়েছে। ড্রেজার দিয়ে খনন করার সাথে সাথে পলি পড়ে আবার ভরে যাচ্ছে। এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে চরম ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ উপ পরিচালক এমএম আজগর আলী বলেন, শিমুলিয়া থেকে কাঁঠালবাড়ি আসার চ্যানেলের মুখে স্রোতের গতিবেগ অনেক বেশি। এই স্রোতের মাঝে ড্রেজিং কার্যক্রম চালানো সম্ভব না। তাই ৭ টি ড্রেজার দিয়ে বিকল্প চ্যানেল তৈরির কাজ চলছে। আশা করি খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া রুটের জিএম এসএম আশিকুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় আমাদের পয়ত্রিশটি নতুন জলযান বরাদ্দ দিয়েছেন। ডাম্ব ফেরিগুলোর পরিবর্তে নতুন আটটি কেটাইপ ফেরি অচিরেই নির্মাণ শুরু করা হবে। আমাদের ফেরি স্বল্পতা থাকলেও যেগুলো চলমান আছে সেগুলো সার্বক্ষণিক মেরামতের মাধ্যমে সচল রাখা হচ্ছে।
যমুনা অনলাইন: আরএম
Leave a reply