নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
আমন চাল ক্রয়ের নামে কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা খাদ্য গুদামের সদ্য বদলি হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার সাব্বির আহম্মেদের বিরুদ্ধে। সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে আমন চাল ক্রয়ের নামে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন খাদ্য কর্মকর্তা ও দালাল সিন্ডিকেট।
এ ঘটনায় সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নিকট নিম্নমানের চাল ক্রয় ও ওজনে কম থাকার অভিযোগ করেছেন খাদ্য বিভাগের অপর এক কর্মকর্তা। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক। তবে ঘটনা তদন্তের পরিবর্তে বিষয়টি আপোষ-রফার অভিযোগ উঠেছে।
চলতি বছরের ২ মার্চ আমনুরা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা খন্দকার সাব্বির আহম্মেদকে সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে বদলি করা হয়। একই আদেশে গোমস্তাপুর উপজেলার দেওপুরা এলএসডির খাদ্য পরিদর্শক সাকিলা নাসরিনকে আমনুরা এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়। তবে বদলি হয়ে যাওয়া খাদ্য পরিদর্শক সাকিলা নাসরিন আমানুরা এলএসডিতে নিম্নমানের চাল দেখে দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। পরে তিনি এ নিয়ে সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগে বলা হয়, ৭ কার্যদিবসের মধ্যে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি সদ্য বদলি হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার সাব্বির আহম্মেদ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলে ১৬ মার্চ দায়িত্বভার হস্তান্তর ও গ্রহণের সময় গুদামে সংরক্ষিত চালের মজুদ ও গুণগত মান যাচাই করা হয়। যাচাইকালে সদ্য সংগৃহীত আমন চালের খামালে পুরাতন বোরো চালের উপস্থিতি ও ওজনের তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। ফলে দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দ্রুততম সময়ে খামালগুলি সঠিক করে দায়িত্বভার হস্তান্তরের অনুরোধ করা হয়। আর এসব কারণে দায়িত্বভার গ্রহণ করেননি সদ্য বদলি হয়ে যাওয়া খাদ্য পরিদর্শক সকিলা নাসরিন।
জানা গেছে, ৩০ টাকা দরের গত বছরের পুরাতন ও নিম্নমানের বোরো চাল ক্রয় করে ৪২ টাকা কেজি দরের আমন চাল হিসেবে দেখানো হয়েছে। এসব চাল আমনুরা সরকারি খাদ্য গুদামের ২, ৩ ও ৪ নম্বর গুদামে রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রতি বস্তায় ৫শ’ গ্রাম থেকে ২শ’ গ্রাম পর্যন্ত ওজন কম রয়েছে। এদিকে অভিযোগের পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুরাতন বস্তা পরিবর্তন করে নতুন আমন চালের বস্তায় সেগুলো পরিবর্তন করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় কৃষকদের নিকট থেকে ক্রয়ের নির্দেশনা থাকলেও এসব চাল দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রয় করা হয়েছে। শুধু তাই নয় এসব বোরো চাল রাজশাহীর কয়েকটি গুদামেও প্রেরণ করা হয়েছে। চাল ক্রয়ের নামে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য বদলি হওয়া আমনুরা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার সাব্বির আহম্মেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ৩ হাজার ৬৩৬ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব চাল নিয়ম মেনেই সংগ্রহ করা হয়েছে। আমাদের মধ্যে দুটি গ্রুপ আছে, এই দুই গ্রুপের কারণে দ্বন্দ্ব। এখানে বদলি হয়ে আসা খাদ্য কর্মকর্তা আমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেটি নিয়ে তদন্ত চলছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে আমার যা শাস্তি হবে সেটা মেনে নেবো।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ও রাজশাহীর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) মোছা. পরভীন বলেন, অভিযোগ করলেই যে অভিযুক্ত হবে সেটি নয়। এক সংসারে থাকলে থালাবাসনেরও শব্দ হয় বিষয়টি সেরকমই হয়েছে। নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। অভিযোগের কোনো ভিত্তি নাই। সেজন্য ওদের বুঝিয়ে বিষয়টি আমরা ক্লোজ করে দিতে চাই। আমরা দু’জনের সাথে কথা বলছি, তবে এখনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি।
ইউএইচ/
Leave a reply