জীবনের পঞ্চাশ বসন্ত পার করলেন ক্রিকেটের বরপুত্র শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। টেস্টে ৬৮, ওয়ানডেতে ৯৬টি ফিফটি উদযাপন করা লিটল মাস্টারের কাছে সবচেয়ে ধীরগতির ‘পঞ্চাশ’ ছিল এটি। স্কুল ক্রিকেটে বিনোদ কাম্বলির সাথে মহাকাব্যিক জুটিতে শচীনের আগমনী বার্তা, বিস্ময় বালকের পরিচিতি ছাপিয়ে ব্যাটিং জিনিয়াস হিসেবে পথচলা; তারপর যেখানে থেমেছেন সেখানে তার উচ্চতায় কেবলই তিনি। ভারতের শত কোটি ক্রিকেট ভক্তের প্রত্যাশার চাপ সামলে বছরের পর বছর সামলে হয়ে উঠেছেন দেশটির ক্রিকেট ঈশ্বর। এই গল্পটা সকলেরই জানা; এক বিস্ময় বালকের ক্রিকেট কিংবদন্তি হয়ে ওঠার গল্প।
ক্রিকেট যদি হয় একটা মহাকাব্য তবে সেই মহাকাব্যের অন্যতম প্রধান চরিত্র শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। দ্য লিটল মাস্টার। ২৪শে এপ্রিল ১৯৭৩ সালে মুম্বাইয়ের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম শচীনের। অধ্যাপক বাবা রমেশ টেন্ডুলকার ছেলের নাম রেখেছিলেন বিখ্যাত সুরকার শচীন দেব বর্মণের নামে। কে জানতো, গানের মঞ্চে নয় এই শচীন ব্যাট হাতে এক মায়াবী মূর্ছনা ছড়িয়ে ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে হয়ে উঠবেন খেলাটিরই সমার্থক!
১৯৮৯ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে শুরু। ড্যান্সিং ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে কিংবদন্তি লেগস্পিনার আবদুল কাদিরকে বাউন্ডারিতে আছড়ে ফেলে জানান দেন, বাউন্সারে পুল-হুকের সাথে সময়ের সেরা স্পিনারকে পরাস্ত করার সামর্থ্যও তার আছে।
এরপর স্বীকৃত ক্রিকেটে কয়েকশতবার পঞ্চাশ পেরিয়ে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেছেন ক্রিকেটের বরপুত্র শচীন। তবে জীবনের এই ফিফটিটা নিশ্চয়ই বিশেষ। ৫০তম জন্মদিনের আগ মুহূর্তে রবি শাস্ত্রীকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শচীন বললেন, এটি আমার জীবনের সবচেয়ে ধীরগতির পঞ্চাশ কিন্তু, একইসাথে সবচেয়ে পরিপূর্ণ ও আকর্ষণীয় ফিফটিও বটে। এই পঞ্চাশে ছিল অনেক উত্থান-পতন। তবে এই ফিফটি করাটা আমি পুরোপুরি উপভোগ করেছি। এটা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। সর্বোপরি, এটা আমাকে ২৪ বছর ধরে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার সম্মান দিয়েছে।
ভারতের জার্সি গায়ে ২৪ বছর কাটানো শচীন যেন নিজেই ক্রিকেটের এক রেকর্ডবুক! আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে টেস্টে ১৫৯২১, ওয়ানডেতে ১৮৪২৬, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৫৩৯৬, লিস্ট এ’তে ২১৯৯৯ রান! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে একশো সেঞ্চুরি হাঁকানো একমাত্র ব্যাটার তিনি। যেন রক্তে-মাংসে গড়া এক রান মেশিন শচীন টেন্ডুলকার, ভারতের জার্সি গায়ে সত্যিকারের এক সুপারম্যান!
আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ও পাঞ্জাব কিংসের ম্যাচ চলার সময়েই ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে কেক কেটে জন্মদিনের আগাম উৎসব করেছেন টেন্ডুলকার। বলেছেন, ১৯৮৩ সালে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই ক্রিকেট খেলার স্বপ্নটা শুরু হয়েছিল। ভারতের হয়ে এত বছর খেলতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। ১৯৮৯ থেকে শুরু করে এখন ২০২৩। ৩৪ বছর ধরে আমি ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো সময়। যেটা চেয়েছিলাম জীবনে সেটাই হয়েছে। জীবনের সব চাওয়া পূর্ণ হয়েছে।
জীবনের ৫০ বসন্ত পার করা শচীন শুধুমাত্র একজন ক্রিকেটার নয়। ৯০ এর দশকে জন্ম নেয়া প্রতিটি ক্রিকেট ভক্তের জন্য একটি আবেগের নাম শচীন টেন্ডুলকার। ব্যাট বলের দুনিয়ায় যার পরিচয় ‘গড অব ক্রিকেট’। যিনি ব্যাট হাতে নামলে প্রার্থনায় বসে যেতো ভারতসহ ক্রিকেট দুনিয়ার অসংখ্য ভক্ত। এক ভক্তের ব্যানারে লেখাই ছিল, কোনো অপরাধ করতে হলে তা শচীনের ব্যাটিংয়ের সময়ই করে ফেলো। তোমার অপরাধ কেউ দেখবে না। কারণ, স্বয়ং ঈশ্বরও এখন খেলা দেখছেন!
তবে আরও এক কাঠি সরেস অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ওপেনার ম্যাথু হেইডেন। এই বাঁহাতি ব্যাটার বলেছিলেন, আমি ঈশ্বরকে দেখেছি। তিনি ভারতের হয়ে ৪ নম্বরে ব্যাট করেন!
/এম ই
Leave a reply