জ্বালানি তেলের ভর্তুকির বিষয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল

|

মাহফুজ মিশু:

জ্বালানি তেলের ভর্তুকির বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের কাছে তা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল। একইসঙ্গে গ্যাসের ভর্তুকির বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে।

রোববার সকাল পৌনে ১০টায় আইএমএফের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল জ্বালানি বিভাগে দায়িত্বপ্রান্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তারা।

বৈঠকের বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে জ্বালানি সচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে জ্বালানি সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন দু’জন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জ্বালানি তেল বিশেষ করে ডিজেলের ভর্তুকি তুলে দেয়ার কথা বলেছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। একইসঙ্গে ভর্তুকি কমাতে জ্বালানি তেলের দাম এক দফা বাড়ানোতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে তারা। ভর্তুকি পুরোপুরি উঠিয়ে দেয়া এবং তা বাস্তবায়নে কত সময় লাগতে পারে সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছে।

জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, জ্বালানি তেলের ভর্তুকি উঠিয়ে দিতে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে দাম সমন্বয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কয়েকমাসের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানানো হয়। তখন বিশ্ব বাজারে দাম বাড়া কমার সাথে সমন্বয় করে দেশের বাজারেও তেলের দাম নির্ধারণ করা হবে।

গ্যাসের ভর্তুকির বিষয়েও জানতে চেয়েছে আইএমএফ’র প্রতিনিধি দল। জবাবে জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জ্বালানি তেলের সমন্বয়ের প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নের পর ফলাফল দেখে গ্যাসের ভর্তুকি কমাতেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বৈঠকে আরও জানানো হয়, আগামী অর্থবছরে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি থাকবে। এখনই ভর্তুকি সম্পূর্ণরূপে উঠানো যাবে না। তবে এর পরিমাণ কমে আসবে।

জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পেট্রোবাংলা থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাওনা ভ্যাট বিষয়েও জানতে চেয়েছে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। তাদের জানানো হয়েছে, যেহেতু দুটোই সরকারি সংস্থা, তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ বা সমস্যা নেই। পেট্রোবাংলা থেকে পাওনা ভ্যাট বুক এডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে।

উল্লেখ্য, আইএমএফের নির্ধারিত সীমার মধ্যে সামগ্রিক ভর্তুকি রাখতে তিন দফা পাইকারি ও খুচরা বিদ্যুতের দাম, এক দফা করে জ্বালানি তেল ও সারের দাম বাড়িয়েছে সরকার। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দফা এবং মার্চে এক দফা ৫ শতাংশ করে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত নভেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার।

চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে আইএমএফ। তিনদিন পরই প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করা হয়। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে দেয়া হবে ঋণের পুরো অর্থ। এ ঋণ নিতে ছোট-বড় ৩৮টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। শর্তের অন্যতম হচ্ছে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনার মাধ্যমে সরকারের ব্যয় সক্ষমতা বাড়ানো। গত আগস্টে পেট্রোল ও অকটেনে ৫০ শতাংশ এবং ডিজেল ও কেরোসিনে ৩৬ শতাংশ দাম বাড়ায় সরকার। শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, হোটেল ও রেস্তোরাঁর গ্যাসের দামও গত ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়ানো হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও গত বছরের জুনে গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়।

সরকারের অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ অতিরিক্ত ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দাবি করে। সংশোধিত বাজেটে অতিরিক্ত ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এ খাতে।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply