আলমগীর হোসেন:
সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের ধারেকাছে নেই মালয়েশিয়ার অভিবাসন ব্যয়। দেশটিতে যেতে কর্মীদের খরচ করতে হচ্ছে ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি টাকা। অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধির জন্যে ভিসা ট্রেডিংকে দায়ী করেছেন জনশক্তি রফতানিকারকরা। তারা বলেন, এজেন্সির সংখ্যা বৃদ্ধির সাথেই শুরু হয়েছে অসম প্রতিযোগিতা। যদিও ভিসা ট্রেডিংয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী।
সমঝোতা চুক্তির পর গত বছরের আগস্ট থেকে কর্মী নেয়া শুরু করে মালয়েশিয়া। এরই মধ্যে দেড় লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে দেশটিতে। যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে আরও লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী। কথা ছিল, মালয়েশিয়ায় যেতে একজন কর্মীর ব্যয় হবে ৮০ হাজার টাকারও কম; যা নিশ্চিত করবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাস্তবে এর ধারেকাছে নেই অভিবাসন ব্যয়। দেশটি যেতে কর্মীদের গুনতে হচ্ছে সাড়ে ৪ লাখ টাকার ওপরে। জনশক্তি রফতানিকারকরা বলছেন, ভিসা বাণিজ্যের কারণেই বেড়েছে অভিবাসন ব্যয়।
বায়রা’র সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুল বলেন, মালয়েশিয়ায় বেতন ভালো, পরিবেশও ভালো। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য চাহিদা যখন একশো হয়, তার বিপরীতে আবেদন থাকে পাঁচশো। ভিসা ট্রেডিংয়ের সাথে যারা জড়িত, তারাই এই সুযোগটি গ্রহণ করেছে।
বায়রা’র নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে ভিসা ট্রেডিংয়ে আগে খরচ ছিল ২-৩ হাজার টাকা। এখন তারা নেয় ৬ হাজার টাকা। ৬ হাজারের সাথে ২৭ গুণ করে দেখেন কত হয়; ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা যায় সেখানে ভিসা কিনতে। তাহলে এটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে? এটা তো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি দিয়ে মালয়েশিয়া কর্মী প্রেরণ শুরু হলেও পরে এ সংখ্যা বেড়ে হয় একশো। জনশক্তি রফতানিকারকরা বলছেন, এজেন্সির সংখ্যা বৃদ্ধির পর শুরু হয় অশুভ প্রতিযোগিতা। অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াও কর্মহীন নিয়োগ বাড়ছে; যা আশঙ্কাজনক বলেও মনে করেন তারা। কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুল বলেন, চাহিদা না থাকলেও অনুমোদন নিয়ে আসা হচ্ছে। তারা টাকা নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছেন। এই কাজগুলো আমরা এখন দেখছি না। কিন্তু ৪-৫ মাস পরে যখন লোক যাবে তখন তারা দেখবে, মার্কেট অস্থিতিশীল হয়ে গেছে। শ্রমিকরা সেখানে গিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে। মার্কেটও অনেকদিনের জন্য বন্ধ হবে।
যদিও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ভিসা বাণিজ্যের বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। কর্মীদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ নিতে এজেন্সি কৌশল বলেও মনে করেন তিনি। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ভিসা ট্রেডিংয়ের যে কথা বলা হয়, আমার কাছে তা শোনা কথা। আমার কাছে কোনো প্রমাণ নাই। শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার একটা অজুহাত হচ্ছে, ভিসা কিনে আনার কথা বলা।
তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি বলেও স্বীকার করেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, কম খরচের জায়গা নিশ্চিতে আমরা হয়তো এখনও পুরোপুরি সফল হয়নি।
/এম ই
Leave a reply