ডি ব্রুইনার গোলটি কেন বৈধ?

|

ছবি: সংগৃহীত

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে কেভিন ডি ব্রুইনার দুর্দান্ত এক গোলে রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ১-১ সমতায় ম্যাচ শেষ করে ম্যানচেস্টার সিটি। ড্রয়ের স্বস্তির সাথে প্রতিপক্ষের মাঠে গোল- দুই মিলিয়ে খেলার ফলাফলে সন্তুষ্টই হয়তো পেপ গার্দিওলার দল। তবে ডি ব্রুইনার সমতাসূচক গোলটি নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তিসহ অনেকের কাছেই মনে হয়েছে, গোলের বিল্ডআপের সময় ঘটে যাওয়া এক ঘটনার কারণে বাতিল হওয়া উচিত ছিল কেডিবির সেই গোল।

ম্যাচের ৬৭ মিনিটে নিজেদের অর্ধে বল ক্লিয়ারের সময় সাইডলাইনের কাছ থেকে বলকে মাঠে ফেরত পাঠান বার্নাদো সিলভা। বেইন স্পোর্টসের থ্রিডি অ্যানিমেটেড মডেলে স্পষ্ট দেখা যায় যে, বলটা সাইডলাইনের বাইরে থেকেই ক্লিয়ার করেছিলেন বার্নাদো সিলভা। অর্থাৎ, অন ফিল্ড রেফারির সেক্ষেত্রে ভুল হয়েছে রিয়েলের পক্ষে থ্রো ইন না দেয়া।

তাই প্রশ্ন আসছে, অন ফিল্ড রেফারি ভুল করলেও ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারি কেন সেখানে হস্তক্ষেপ করেনি। সিবিএস স্পোর্টস রুলসের প্রতিনিধি ক্রিস্টিনা উনকেল’র মতে, এই ঘটনায় ভিএআর হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, কারণ এই ঘটনাটি গোলের ঘটনার ডিরেক্ট অফেনসিভ বিল্ডআপের সময় ছিল না।

ফিফার হেড অব গ্লোবাল ফুটবল আর্সেন ওয়েঙ্গার বেইন স্পোর্টসকে ভিএআর ও ক্লিয়ারেন্স সম্পর্কে বলেন, ভিএআর সাধারণত যাচাই করে দেখে যে গোলটি হয়েছে নাকি হয়নি। সে রকম পরিস্থিতিতেই ভিএআর হস্তক্ষেপ করে থাকে। ভিএআর গোলের অনেক আগের ঘটনা যাচাই করে দেখে না যে, বল আউট হয়েছিল নাকি হয়নি।

এছাড়াও ক্রিস্টিনা নিজের টুইটারে ঘটনাটির থ্রিডি অ্যানিমেশনের একটা ছবি দিয়ে বলেছেন, যদিও এটা ম্যানুফ্যাকচার্ড গ্রাফিক্স, তারপরও বলের ছায়া লক্ষ্য করে দেখুন। গোলাকার বলটা হাওয়ায় ভাসছে, কিন্তু এর পুরোটা লাইন ক্রস করেনি, কিছু অংশ লাইন স্পর্শ করছিল। বলের পুরো অংশকে লাইন অতিক্রম করে যেতে হবে। এমন ঘটনা কাতার বিশ্বকাপে জার্মানি-জাপান ম্যাচেও ঘটেছিল।

ছবি: সংগৃহীত

ইএসপিএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বার্নাদো সিলভার সেই আলোচিত ক্লিয়ারেন্সের পর অ্যাটাকিং ফেইজ অব প্লে (এপিপি) পুনরায় শুরু হয়েছিল যখন প্রতিপক্ষের কোনো প্রেসিং ছাড়াই এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার ভুল পাস যায় ম্যান সিটির খেলোয়াড়ের কাছে। কামাভিঙ্গার সেই পাসের আগের কোনোকিছুই রিভিউয়ের জন্য বিবেচিত হবে না।

ফুটবলের ল’স অব গেইম এর ১৪১ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা আছে, আক্রমণভাগের যে কোনো ঘটনা যা সরাসরি গোলের বিল্ডআপের সাথে জড়িত, তা রিভিউয়ের আওতায় থাকবে।

এছাড়া, ইএসপিএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাটাকিং ফেইজ অব প্লে বা, এপিপি শেষ হয় যেসব ক্ষেত্রে তা হচ্ছে- প্রতিপক্ষ দল তাদের কোনো খেলোয়াড়ের মাধ্যমে বলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে যখন (১) বিপক্ষের কোনো প্রেসিং ছাড়াই বল ক্লিয়ার হওয়া এবং (২) পরিষ্কারভাবে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পাস করা।

প্রতিপক্ষের প্রেসিং ছাড়াই বলের দখল কামাভিঙ্গার কাছে। ছবি: সংগৃহীত

পরবর্তী এপিপি শুরু হওয়ার সংজ্ঞানুসারে, অ্যাটাকিং দল (ম্যান সিটি) বলের দখল পাবে যখন প্রতিপক্ষ হারিয়ে ফেলবে (ভুল পাস বা ক্লিয়ারেন্সের মাধ্যমে) বলের নিয়ন্ত্রণ।

কামাভিঙ্গার ভুল পাস দখলে নিয়েছেন রদ্রি। ছবি: সংগৃহীত

এবার দেখা যাক, ম্যাচে কী হয়েছিল। থ্রো ইনের পর কামাভিঙ্গার কাছে বলের দখল হারান কেভিন ডি ব্রুইনা। কিন্তু ভুল পাস বাড়ান কামাভিঙ্গা, যা ইন্ট্রাসেপ্ট করে রদ্রি পাস বাড়ান ডি ব্রুইনার দিকে। আর সেই শটেই থিবো কর্তোয়াকে পরাস্ত করেন এই বেলজিয়ান প্লে মেকার। এতে পরিষ্কারভাবে বলা যায়, এপিপি পুনরায় শুরু হয়েছিল এবং কামাভিঙ্গার ভুল পাসের কারণে ভিএআরের হস্তক্ষেপ করার ক্ষেত্রও নষ্ট হয়।

ফুটবলের আইনকানুন বরাবরই জটিল এবং বিতর্কিত। এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের হাই ভোল্টেজ ম্যাচের এই ঘটনা সেই বিতর্ককে নতুন করে উস্কে দিলো।

আরও পড়ুন: ডি ব্রুইনার গোল বাতিল হওয়া উচিত ছিল: আনচেলত্তি

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply