চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়াভাই’ খ্যাত বর্ষীয়ান চিত্রনায়ক, সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক)। সোমবার (১৫ মে) সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। প্রায় পাঁচ দশক ধরে বাংলা সিনেমার বড় পর্দা মাতিয়েছেন তিনি। আজকের দিনে ফিরে দেখি কিংবদন্তি এ অভিনেতার সেরা চলচ্চিত্রগুলোকে।
তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা এ ইট-কাঠ-পাথরের ঢাকা শহরে অথচ বাংলার সবুজ-শ্যামল গ্রামের দামাল ছেলের রূপ তার চেয়ে বেশি ভালো করে পর্দায় তুলে ধরতে পারেননি আর কেউই, তিনি চিত্রনায়ক ফারুক। ‘সারেং বউ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সাহেব’, ‘মিয়াভাই’, ‘সুজনসখী’, ‘বিরাজবৌ’- এর মতো অসংখ্য কালজয়ী চলচ্চিত্রে স্মরণীয় অভিনয়ের জন্য তার নাম বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে লেখা রয়েছে স্বর্ণাক্ষরে।
তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই। তবে সবার নজরে আসেন ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমানের ‘আবার তোরা মানুষ হ’ সিনেমা দিয়ে। ১৯৭৫ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘লাঠিয়াল’ -এ ববিতার বিপরীতে অভিনয়ের জন্য পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার হাতে ওঠে তার।
সে বছরই তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত কালজয়ী সিনেমা ‘সুজন সখী’। ফারুক ও কবরীর অভিনয় ও পর্দার রসায়ন আজও স্মরণ করেন পুরোনো দিনের দর্শকরা। এ সিনেমার সুবাদে চলচ্চিত্রে গ্রামীণ যুবকের চরিত্রে স্থায়ী আসন গড়ে তোলেন তিনি।
১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ সিনেমাটির বাণিজ্যিক সাফল্য ফারুককে নায়ক হিসেবে আরও প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। ১৯৭৮ সালে শহীদুল্লাহ কায়সারের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘সারেং বৌ’ সিনেমাটি নারীকেন্দ্রিক হলেও ‘কদম সারেং’ চরিত্রে জীবনঘনিষ্ট অভিনয়ের জন্য ক্ল্যাসিক অভিনেতা হিসেবে গণ্য হন তিনি। সে বছরই আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ সিনেমায় মিলন চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেন ফারুক।
১৯৭৯ সালে ফারুক হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান নায়ক। সে বছর তার অভিনীত ত্রিশটির বেশি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। বিশেষ করে গ্রামীণ তরুণের আইকন হয়ে যান তিনি। তবে ১৯৮৭ সালে ‘মিয়াভাই’ সিনেমাটি সাফল্য পাওয়ার পর দর্শকমহলে তার ‘মিয়াভাই’ নামটিই জনপ্রিয়তা পায়।
নব্বই দশকের শেষে কয়েকটি চলচ্চিত্রে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে দেখা যায় ফারুককে। ব্যক্তিগত ব্যস্ততার জন্য রূপালি পর্দা থেকে কিছুটা দূরে সরে যান তিনি। চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ না রাখলেও নায়ক ফারুক অভিনীত শতাধিক চলচ্চিত্র তাকে বাংলাদেশের রুপালি পর্দায় স্মরণীয় করে রেখেছে, রাখবে আজীবন।
/এসএইচ
Leave a reply