গাজীপুর সিটি করপোরশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে হারিয়েছেন তিনি। রাজনীতিতে পোড় খাওয়া আজমত উল্লা খানকে হারিয়ে এই শিল্প অঞ্চলের রাজনীতিতে চমক দেখালেন জায়েদা খাতুন।
সাধারণ গৃহিণী থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করে প্রথমবারেই জয় ছিনিয়ে এনেছেন এই নারী। সাথে নজর কেড়েছেন সারাদেশের মানুষের। নারায়ণগঞ্জের সেলিনা হায়াৎ আইভীর পর তিনিই দ্বিতীয় নারী, যিনি দেশের কোনো সিটি করপোরেশনের নগর মাতা নির্বাচিত হলেন।
সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে গাজীপুরের নতুন মেয়র হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লা খান নৌকা প্রতীক নিয়ে ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট পেয়েছেন। আর হাতপাখা প্রতীকে গাজী আতাউর রহমান ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দিবাগত রাতে ফল ঘোষণার কেন্দ্র জেলা পরিষদ ভবনের বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে ফলাফল পেয়ে উল্লাসে ভেঙে পড়েন জায়েদা খাতুনের সমর্থকরা। ভোটগ্রহণ শেষে ফল ঘোষণার শুরু থেকেই বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে জাহাঙ্গীর আলম তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। তবে, এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান। বিকেলের পর তার টঙ্গীর বাসভবনে ফিরে ফলাফল জেনেছেন তিনি। সেইসঙ্গে জেলার দায়িত্বশীল জ্যেষ্ঠ নেতাদেরও ফল ঘোষণার সময় দেখা যায়নি।
যমুনা টেলিভিশনের সবশেষ আপডেট পেতে Google News ফিড Follow করুন।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় শুরু হয় গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বিরতিহীনভাবে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হয়। কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় ভোট।
ভোটগ্রহণের শুরু থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের পঞ্চম তলার কন্ট্রোল রুম থেকে নির্বাচন মনিটরিং করা হয়। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া না গেলেও ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে ঢুকে পড়ায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। নির্বাচন কমিশন থেকে সিসি ক্যামেরায় দেখে খবর দেয়া হলে তাদের আটক করা হয়।
এই নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন প্রার্থী আছেন। এছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
গাজীপুর সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডে এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৭ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৮ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার আছে ১৮ জন। ৪৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ ভোটার এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।
সকালে ভোট দিয়ে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে জানিয়েছিলেন আজমত উল্লা খান। ভোট শুরুর ৪০ মিনিট পর নিজ বাড়ির পাশে দারুস সালাম মাদারাসার ৩ নম্বর ভোটকক্ষে ভোট দেন তিনি। এ সময় ভোটের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এ প্রার্থী।
অন্যদিকে, গাজীপুরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটদান শেষে জায়েদা খাতুন সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বলেন, ইভিএম নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। ভোটকেন্দ্রগুলোর পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভালো আছে ৷ এসব নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই।
তবে, সন্ধ্যার পর কর্মী-সমর্থকসহ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযোগ করতে যান জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় ভোটের ফলাফল আটকে রাখার অভিযোগ তুলেন তিনি। পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণার আগেই জাহাঙ্গীর আলম তখন দাবি করেন, তার মা জায়েদা খাতুন জয়ী হয়েছেন। তার কাছে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের সব কেন্দ্রের ফলাফল রয়েছে।
ফলাফল ঘোষণায় রিটার্নিং কর্মকর্তা দেরি করছেন কেন, এমন প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশও করেন জাহাঙ্গীর আলম। বলেন, ইভিএমে ভোট শেষ হয়েছে ৪টায়। এতক্ষণ ফলাফল দিতে লাগে না। অনেক কেন্দ্রের কাউন্সিলরদের ফলাফল দেয়া হয়েছে। মেয়রের দেয়া হচ্ছে না। ফলাফল নিয়ে যদি ছিনিমিনি খেলা হয় তাহলে আমরা মানবো না। কোনো ষড়যন্ত্র মানা হবে না। আমি গাজীপুরের গার্মেন্টসকর্মী, মালিক ও জনগণকে বলবো যদি ছিনিমিনি হয় তাহলে আপনারা প্রতিবাদ করবেন।
/এমএন
Leave a reply