এম্পায়ার স্টেট, সেন্ট্রাল পার্ক টাওয়ার, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের মতো লাখ লাখ আকাশচুম্বী অট্টালিকাই নিউইয়র্ক শহরকে দেয় আলাদা পরিচিতি। নজরকাড়া স্থাপত্যশিল্পের এসব ইমারত হয়ে উঠেছে মার্কিন আধুনিকতার প্রতীক। তবে নিউইয়র্ককে বিশেষত্ব দেয়া আকাশচুম্বী এসব ভবনই কাল হয়ে দাঁড়ালো বিশ্বখ্যাত এই শহরের জন্য। খবর রয়টার্সের।
সম্প্রতি এক মার্কিন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য। তাতে বলা হয়েছে, ভবনের ভারে দেবে যাচ্ছে নিউইয়র্ক নগরী! গবেষকদের শঙ্কা, বছরে ১ থেকে দুই মিলিমিটার হারে দেবে যাচ্ছে শহরের ভূভাগ। কিছু কিছু এলাকায় সে হার দ্বিগুণ। যার মূল কারণ হিসেবে ১০ লাখের বেশি সুউচ্চ আট্টালিকাকে দায়ী করছেন তারা।
এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে ধীরে ধীরে শহর তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থার গবেষক টম পারসনস বলেন, বিষয়টা অনেকটা অনিবার। মাটি ক্রমশ দেবে যাচ্ছে আর পানির স্তর উপরে উঠে আসছে। একটা পর্যায়ে দুটোর স্তরই সমান হয়ে যাবে। অবশ্য সময়টা এখনও নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব না।
নিউইয়র্ক শহর দেবে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে বহুতল এসব ভবনকেই সর্বাগ্রে রাখছেন গবেষকরা। ৭৮৩ বর্গকিলোমিটারের শহরে রয়েছে ১০ লক্ষাধিক ভবন। বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, এসব তৈরিতে ব্যবহৃত কংক্রিট, ইট, বালি, ইস্পাত আর কাচের ওজন ৭৬২ বিলিয়ন কেজি। যা কিনা ১৪ কোটি পূর্ণবয়স্ক হাতির ওজনের সমান। রয়েছে শহরটিতে বসবাসরত ৮৪ লাখ মানুষ এবং তাদের ব্যবহৃত আসবাব আর যানবাহন। এছাড়া এলাকা ভরাট করে ভবন নির্মাণও ঝুঁকি বাড়িয়েছে কয়েকগুণ।
অতি ওজনে ভূভাগ দেবে যাওয়া ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাবও পড়ছে নিউইয়র্কের ওপর। ক্রমশ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে ঝুঁকি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গেলো সাত দশকে নিউইয়র্ক সিটির আশপাশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ৯ ইঞ্চি। ২০৫০ সাল নাগাদ যা ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়তে পারে।
টম পারসনস বলেন, নিউইয়র্কের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির মাটি রয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কিছু এলাকাকে কৃত্রিমভাবে ভরাট করা হয়। এসব এলাকা দেবে যাওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমাবাহ আশঙ্কাজনক হারে গলছে। এতে শহর তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও বেড়েছে।
নিউইয়র্ক ছাড়াও দেবে যাওয়ার এই তালিকায় রয়েছে বিশ্বের আরও অনেক শহর। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার অবস্থান যার মধ্যে শীর্ষে। শহরটিকে বিশ্বের দ্রুততম ডুবতে থাকা মহানগর বলে আখ্যা দিয়েছেন গবেষকরা। প্রতি বছর প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার করে দাবতে থাকা শহরটির ৯৫ শতাংশ এলাকা ২০৫০ সাল নাগাদ তলিয়ে যাবে পানির নিচে।
/এমএন
Leave a reply