প্রবাসী ভারতীয়দের এক কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ভারত-কানাডা সম্পর্কে। সম্প্রতি, কানাডায় শিখ সম্প্রদায়ের এক শোভাযাত্রায় উপস্থাপিত হয় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে হত্যার দৃশ্য। এতে ক্ষোভ জানিয়েছে দিল্লি। বিষয়টিকে ‘ভোট ব্যাংকের রাজনীতি’ আখ্যা দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী। যদিও কংগ্রেস মনে করছে, ভারতের এ প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট নয়।
জানা গেছে, গত রোববার (৪ জুন) পাঞ্জাবের স্বর্ণমন্দিরে চালানো ‘অপারেশন ব্লু স্টার’- এর ৩৯তম বার্ষিকী ঘটনা স্মরণে কানাডার ব্র্যাম্পটনে একটি প্যারেড বের করে কানাডা প্রবাসী শিখ সম্প্রদায়। ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ শোভাযাত্রায় ছিলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে হত্যার দৃশ্য। যাতে, ইন্দিরাকে হত্যাকারী পাঞ্জাবি দেহরক্ষীদের মহান হিসেবে তুলে ধরা হয়।
এদিকে, শিখদের একটি অংশের স্বাধীনতা আন্দোলন, স্বর্ণমন্দিরে অভিযান কিংবা তার সূত্র ধরে ইন্দিরা গান্ধির হত্যাকাণ্ড-পুরো বিষয়টি ভারতের জন্য স্পর্শকাতর। কানাডার মাটিতে, বিতর্কিত বিষয়টির উপস্থাপনে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ মোদি প্রশাসন। দিল্লির অভিযোগ, ভোটের রাজনীতিতে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে অপরাধীদের।
এ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর বলেন, প্যারেডের এ ইস্যুর সাথে আরও বড় কোনো সমস্যা জড়িত। ভোট ব্যাংকের রাজনীতি ছাড়া অন্য কোনো কারণে কেউ এমনটা করতে পারে বলে আমি মনে করি না। বড় কথা হলো, যারা হিংসা-বিদ্বেষে বিশ্বাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী বা উগ্রপন্থি তাদের ছাড় দেয়া হচ্ছে। দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা ভালো নয়।
সরকারের এমন প্রতিক্রিয়ায় অবশ্য সন্তুষ্ট নয় কংগ্রেস। ভারতের প্রধান বিরোধী দলের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর নিজের জানাতে হবে প্রতিবাদ।
এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুর্যেওয়ালা বলেন, বিদেশের মাটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এমন কুকীর্তি কীভাবে সহ্য করছে ভারত সরকার? দেশের প্রধানমন্ত্রী এখনও নিশ্চুপ। তিনি প্রত্যেকটি ঘটনা রাজনৈতিক দৃষ্টিতে দেখেন। নরেন্দ্র মোদির প্রতি আহ্বান, আপনি কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করুন। প্রতিবাদ জানান।
যদিও বিষয়টি নিয়ে ট্রুডো সরকারের তরফ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে, ভারতীয় বংশোদ্ভুত এক কানাডিয়ান এমপির দাবি- শীঘ্রই উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ভারতীয় বংশোদ্ভুত কানাডিয়ান এমপি চন্দ্র আর্য্য এ প্রসঙ্গে বলেন, কানাডা বরাবরই বাকস্বাধীনতার চর্চায় বিশ্বাসী। কিন্তু, দেশটিতে বসবাসরত খালিস্তান সমর্থকরা সীমা অতিক্রম করেছে। কিন্তু, কানাডায় জনসম্মুখে সহিংসতা বা বিদ্বেষের গুণকীর্তণ করার অবকাশ নেই।
প্রসঙ্গত, শিখ স্বাধীনতাকামীদের দমনে ১৯৮৪ সালের ১-১০ জুন পাঞ্জাবের স্বর্ণমন্দিরে বিশেষ এক অভিযান চালায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ নামে খ্যাত সে অভিযানের নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি। এর কিছুদিন পরই শিখ দেহরক্ষীদের হাতে খুন হন তিনি।
/এসএইচ
Leave a reply