স্টাফ করেসপনডেন্ট, পটুয়াখালী:
নিজের পাতানো ফাঁদেই জীবন দিলেন পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার আলোচিত সেই গৃহবধূ মিম। স্বামী ও শাশুড়িকে ফাঁসানোই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গায়ে আগুন লাগিয়েছিলেন মিম। এ কাজে সহযোগিতা করেছেন তার চাচাতো ভগ্নীপতি মো. আরিফ হোসেন। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন হিসেবে আরিফকে শনাক্তের পর গত ১১ জুন রাতে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সোমবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) দুপুরে নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম।
পুলিশ সুপার বলেন, আসামিকে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে এবং তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এ ঘটনার সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যমুনা টেলিভিশনের সবশেষ আপডেট পেতে Google News ফিড Follow করুন।
গ্রেফতারকৃত আরিফের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, শাশুড়ি পিয়ারা বেগমের সাথে মিমের সম্পর্ক ভালো ছিল না। পিয়ারা বেগম মিম ও তার সন্তানকে প্রায়শই নির্যাতন করতেন। যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে আগুন লাগানোর একটি নাটকের পরিকল্পনা করেছিলেন মিম। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে নিজের ফাঁদে নিজেই ধরা খেয়েছেন তিনি। ঘটনার আগে বাসায় ২ লিটার কেরোসিন তেল সংগ্রহ করে রেখেছিলেন মিম। ঘটনার দিন আরিফকে ফোন করে বাসায় আসতে বলে গায়ে কেরোসিন ঢেলে নিজেই নিজেকে বাঁধেন। এ সময় তাকে বাধা দিলেও আরিফের নিষেধ শোনেননি মিম। পরে বাধ্য হয়ে আরিফ আগুন লাগিয়ে দরজা বন্ধ করে সেখান থেকে চলে যায়।
আরিফ হেসেন সম্পর্কে হালিমা আক্তার মিমের চাচাতো বোনের স্বামী। আরিফ উপজেলার লেবুখালী ইউনিয়নের কার্তিকপাশা গ্রামের মৃত হামেদ সিকদারের ছেলে। তিনি ঢাকার কেরাণীগঞ্জে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে কর্মরত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার ৮ জুন বিকেলে দুমকি উপজেলার নতুন বাজার এলাকায় হালিমা আক্তার মিমের শরীরে আগুন দিয়ে ঘরের দরজা সামনে থেকে বন্ধ করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় মিমের পাশাপাশি অগ্নিদগ্ধ হয় তার শিশু সন্তান ওয়ালিফ হোসেন জিসান। তাদের আর্ত চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। গত শুক্রবার ৯ জুন মিমের মামা ওমর ফারুক বাদী হয়ে দুমকি থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে শুক্রবার সকালে মিমের শাশুড়ি পিয়ারা বেগমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত শুক্রবার বিকেলে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিম। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার রাতে
দুমকিতে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
ইউএইচ/
Leave a reply