২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ বিনির্মাণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীর খসড়া দ্রুত অনুমোদন চান বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের অনেক সদস্য।
শনিবার (১৭ জুন) ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন কেন জরুরি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তারা এ দাবি জানান।
নারী মৈত্রী আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শবনম জাহান শিলা, অ্যারোমা দত্ত, নার্গিস রহমান, লুৎফুন নেসা খান, আফরোজা হক, আদিবা আনজুম মিতা, বাসন্তী চাকমা, উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম এবং সাবেক সংসদ সদস্য শিরিন নাঈম পুনম। নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি এতে সভাপতিত্ব করেন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদুর রহমান।
মতবিনিময় সভায় নাছিমা বেগমকে প্রধান উপদেষ্টা করে এক কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে শবনম জাহান শিলাকে আহ্বায়ক করা হয়।
নবগঠিত এই ফোরামের সদস্যরা জানান, তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীর খসড়া দ্রুত অনুমোদনের ব্যাপারে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবেন। মন্ত্রিসভায় খসড়া অনুমোদনের পর যখন সেটি সংসদে উপস্থাপন করা হবে, তখন আইন পাশের ব্যাপারে জোরালো বক্তব্য প্রদান করবেন এবং আইন পাশের দাবিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবেন। পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলেও তারা মনে করেন। এ সময় তারা ২০৪০ সালের মধে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে একযোগে শপথ নেন।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর প্রকল্প সমম্বয়কারী নাসরিন আক্তার। প্রবন্ধে জানানো হয়, দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে এবং বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তামাক ব্যবহারকারীর বিবেচনায় অন্যতম। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ মতে, বাংলাদেশে ৩৫.৩ শতাংশ বা প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়ক্ষ মানুষ (১৫ বছর বা বেশি) তামাক ব্যবহার করে থাকে। অন্যদিকে ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ মানুষ ধূমপান না করেও বিভিন্ন গণপরিবহন পাবলিক প্লেসে প্রতিনিয়ত পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। টোব্যাকো এটলাস ২০১৮ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের ফলে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ অকাল মৃত্যুবরণ করেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) এর অধিকতর সংশোধনের জন্য এফসিটিসির আলোকে একটি খসড়া প্রস্তাবনা প্রণয়ন করেছে। যেখানে সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রর্দশন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং ট্যোব্যাকো প্রোডাক্টস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার কথা খসড়ায় বলা হয়।
/এমএন
Leave a reply