আলমগীর হোসেন:
আমদানি কমার পরও বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি বাড়ছে। অর্থবছরের দশ মাসে পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারে। একে উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, এভাবে চললে রিজার্ভের ওপর আরো চাপ পড়বে। বাড়তে পারে ডলারের দামও। এতে নষ্ট হবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে।
রিজার্ভ সংরক্ষণে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছর থেকে কড়াকড়ি আরোপ করা হয় পণ্য আমদানিতে। ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে জুড়ে দেয়া হয় নানা শর্ত। যার ফলে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আমদানি কমেছে সাড়ে প্রায় ১৪ শতাংশ। বাণিজ্য ঘাটতি ২৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
এসব উদ্যোগের ফলে স্বাভাবিকভাবেই বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি কমে আসার কথা। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টোটা। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮শ’ ৮০ কোটি ডলার ডলারে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৩শ’ কোটি ডলার বেশি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, গত এক বছর ধরে এটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এমনকি, আমদানি অনেক কমিয়ে আনার পরও এই ঘাটতি। এর অর্থ কী? আমাদের টাকাপয়সা যাচ্ছে কোথায়? অন্য খাতে পেমেন্ট বেশি হচ্ছে; যেমন, বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে। নাহলে, আমদানি কমিয়েও ঘাটতি কেন বাড়বে যদি রফতানি ঠিক থাকে?
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, যে ঘাটতিটা আছে তার কোনো হিসাব নেই। এটাকে বলে ‘এররস অ্যান্ড অমিশনস’। জুলাই-এপ্রিলে আমাদের ৮.৮ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি, তার মাঝে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি এররস অ্যান্ড অমিশনস। এটা এমন একটা আউটফ্লো, যার হিসাব আমরা দিতে পারছি না।
পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। তাই যে কোনো উপায়ে ডলারের যোগান বাড়াতে মনোযোগ দিতে হবে সরকারকে। শিল্পের কাঁচামাল এবং মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমতে থাকলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রফতানিতে। এর ফলে বেকারত্ব এবং মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সবকিছু আমাদের বিরুদ্ধে। লোডশেডিং যদি এভাবেই হয়, তবে উৎপাদন যেভাবে চলার কথা সেভাবে চলবে না। এমনকি, ডলারের সংকটের কারণে শিল্পের কাঁচামাল যদি ৫০ শতাংশ কম আমদানিকৃত হয় তাহলে রফতানি কোথা থেকে আসবে?
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ডলার সংকট কাটানোর জন্য আমরা যে পথে গিয়েছি, ‘ইমপোর্ট ডিমান্ড কনট্রাকশন’, এই ইমপোর্ট ডিমান্ড কমাতে গিয়ে আমাদের আমদানি যেটুকু কমেছে তাতে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে মূল্যস্ফীতির উপর চাপ বাড়িয়েছে। সেই সাথে, উৎপাদন যদি না হয় তাহলে কর্মী রাখা কেন?
ডলারের যোগান বাড়তে বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
/এম ই
Leave a reply