গণঅধিকার পরিষদে দ্বন্দ্ব চরমে; ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ

|

গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক পদ থেকে ড. রেজা কিবরিয়াকে সরিয়ে দিয়েছে সংগঠনটির সদস্য সচিব নুরুল হক নূরের অনুসারীরা। সংগঠনের ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খাঁনকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে মনোনীত করেছে তারা।

সোমবার (১৯ জুন) সন্ধ্যায় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও দফতর সমন্বয়ক শাকিল উজ্জামান। তবে, তাদের এ সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ’ বলেছেন ড. রেজা কিবরিয়া।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ আতাউল্লাহর সঞ্চালনা ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের সভাপতিত্বে পূর্বনির্ধারিত কার্যনির্বাহী পরিষদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাংগঠনিক আলোচনা ছাড়াও গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতায় উদ্ভূত পরিস্থিতি ও দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে সুশৃঙ্খলভাবে দলের নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে ১ নং যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খাঁনকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়।

এর আগে, সোমবার সন্ধ্যায় পরস্পরকে দোষারোপ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুর। পরে নুর উক্ত সভা আহ্বান করেন।

রেজা কিবরিয়া তার ফেসবুক পেজে পোস্ট করা স্ট্যাটাসে জানান, গতকাল রোববার (১৮ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় গুলশান-২ এর ৫৫ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার আহ্বান ও সভাপতিত্বে একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় সদস্য সচিব নুরুল হক নুরসহ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা চলে রাত ৯.৩০ মিনিট পর্যন্ত। সভায় দলীয় শৃঙ্খলা আনয়নের ক্ষেত্রে সদস্য সচিবকে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের কারণ ব্যাখ্যা চেয়ে আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার মতামত দিলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।

রেজা কিবরিয়ার দাবি, এমন পরিস্থিতিতে চরম অস্বস্তিতে পড়েন বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারা। এ অবস্থায় সভা স্থগিত করে সভাস্থল ত্যাগ করেন সভার সভাপতি।

তিনি উল্লেখ করেন, সভা চলাকালীন প্রবাসী অধিকার পরিষদের কমিটি পুনর্গঠন, ইতোমধ্যে সংগৃহীত অর্থের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি এবং সুষ্ঠু হিসাব ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা, দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে হুমকি এমন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও ইসরায়েলের বিতর্কিত মোসাদ সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে গোপন বৈঠক, দলীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে অসত্য সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সদস্য সচিব ভিপি নুরুল হক নুরকে দায়ী করা হয়।

রেজা কিবরিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, দল পরিচালনার ক্ষেত্রে একক কর্তৃত্বের পরিবর্তে যৌথ নেতৃত্বের বিকাশে দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক উচ্চতর পরিষদ ও নির্বাহী পরিষদ গঠনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।

এদিকে, রেজা কিবরিয়ার বক্তব্যকে অসত্য ও মিথ্যাচার বলে দাবি করেছেন নুরুল হক নুর।

সোমবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে পোস্ট করা স্ট্যাটাসে নুর বলেন, সরকারবিরোধী প্রোগ্রামের নামে রেজা কিবরিয়া ব্যাংকক, কাঠমুন্ডুতে একাধিকবার মিটিংয়ে অংশ নেন এবং দেশে এসে মনোনয়ন বিক্রির চেষ্টা করেন।

নুর বলেন, রোববার (১৮ জুন) বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে বৈঠক ও ইনসাফ কায়েম কমিটির প্রোগ্রামে অংশ নেয়ার বিষয়ে রেজা কিবরিয়ার বাসায় জরুরি মিটিংয়ে বসেছিলেন দলটির নেতারা। মিটিংয়ে এসব বিষয়ে জবাব চাইলে রেজা কিবরিয়া কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বলে দাবি নুরের।

নুর জানিয়েছেন, নেতৃবৃন্দের প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বাসার ছাদের মিটিং ত্যাগ করে বাসায় ঢোকেন রেজা কিবরিয়া। পরে তিনি আর না আসায় মিটিং অসমাপ্ত থাকে। অসমাপ্ত মিটিং সম্পন্ন করতে এবং রেজা কিবরিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ (সোমবার) তারা পুনরায় মিটিংয়ে বসেন।

ফেসবুক পোস্টে নুর দাবি করেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় জনৈক মাসুদ করিম/এনায়েত করিমের সাথে মিলে বিএনপি ভাঙা ও উকিল আব্দুস সাত্তার মডেলে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিতে রেজা কিবরিয়া কাজ করছেন।

নুর বলেন, গণঅধিকার পরিষদের মতো একটা সম্ভাবনাময় দলের আহ্বায়ক হয়েও তিনি (রেজা কিবরিয়া) দলের মিটিং-মিছিল, কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না। বরং টাকার লোভে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁদে পড়ে তিনি বিএনপি ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দুঃস্বপ্নে বিভোর। আমরা সেটাতে সমর্থন না দেয়ায় আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে গণঅধিকার পরিষদে ভাঙন এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন তিনি।

/এসএইচ

 


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply