স্টোকসের ইনিংস ঘোষণা ভুল না ঠিক?

|

ছবি: সংগৃহীত

ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস যখন এজবাস্টন টেস্টের প্রথম দিনের শেষ ভাগে ইনিংস ঘোষণা করেন, ইংল্যান্ডের রান তখন ৮ উইকেটে ৩৯৩। ক্রিজে তখন জো রুট অপরাজিত ছিলেন ১১৮ রানে। ৭৮ ওভার শেষেই স্টোকসের আকস্মিক এই সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন হয়তো অনেকেই। আবার অনেকে এই সিদ্ধান্তকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। অতিরিক্ত সাহসী, অপরিণামদর্শী কিংবা দেখনদারীর প্রবণতা- অনেক বিশেষণই দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। শেষে যখন এজবাস্টনে ২ উইকেটে পরাজয় স্বীকার করলো ইংল্যান্ড তখন অনুমিতভাবেই ফিরে এসেছে সেই প্রশ্ন, স্টোকসের সেই ইনিংস ঘোষণার কারণেই কি ম্যাচটি হারলো ইংল্যান্ড!

ম্যাচ শেষেও এ নিয়ে কথা বলতে হয়েছে ইংল্যান্ড অধিনায়ককে। স্টোকস বলেছেন, আমি ভেবেছি অস্ট্রেলিয়াকে ধাক্কা দেয়ার ওটাই ছিল উপযুক্ত সময়। ড্রেসিংরুমে বলেছি, অন্য যেকোনো দলের বিপক্ষে ওই অবস্থানে থাকলে আমরা এমনটিই করতে চাইতাম। এক বছর ধরে আমরা যেভাবে ক্রিকেট খেলছি, অ্যাশেজ বলেই সেটাকে আমি বদলাবো না।

স্টোকসের এ আকস্মিক ইনিংস ঘোষণার কারণ কী? একটু পেছন ফেরা যাক। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর ইংল্যান্ড ক্রিকেটের খোলনলচে বদলে ফেলার চেষ্টা করে ইসিবি। সাদা বলের ক্রিকেটে নতুন সেটআপ নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে হাজির হয় এউইন মরগ্যান বাহিনী। খেলে ভয়ডরহীন ক্রিকেট। ফলাফলও হাতে আসে, ২০১৯ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। কিন্তু যুগ যুগ ধরে ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটটা যেভাবে খেলে, সেভাবেই রয়ে যায়। এখানে কোনো বদলের গান শোনা যায়নি। একসময় পরিস্থিতি এমনও দাঁড়ায় যে, জো রুটের নেতৃত্বে শেষ ১৭ ম্যাচে মাত্র ১টিতে জয় পায় রুটের ইংল্যান্ড। অবশেষে ইসিবির টনক নড়ে।

টেস্টেও নতুন সেটআপে নতুন মানসিকতা আনার পরিকল্পনা করা হয়। কোচ হিসেবে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয় সাবেক কিউই তারকা ক্রিকেটার ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে। সিদ্ধান্তটি তখন অনেকের কাছেই ছিল অকল্পনীয়। কারণ, ম্যাককালামের ক্রিকেটীয় দর্শন হচ্ছে, আক্রমণ, আক্রমণ এবং আক্রমণ। টেস্ট ক্যাপ্টেন করা হয় বেন স্টোকসকে, যার মানসিকতার সাথে কোচ ম্যাককালামের মানসিকতা অনেকটাই মিলে যায়। তারা দু’জন মিলে টেস্ট ক্রিকেটে চালু করে এক নতুন ‘ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট’। ভয়ডরহীন আক্রমণাত্মক মানসিকতার ইংল্যান্ডের এই খেলার ধরনকে নাম দেয়া হয় ম্যাককালামের ডাকনাম ‘বাজ’ থেকে। শুরু হয় ‘বাজবল’ ক্রিকেট।

বেন স্টোকসের দল তাই চতুর্থ ইনিংসে তিনশো বা এর আশেপাশের রান তাড়া করাটা অভ্যাসে পরিণত করে। স্টোকসের দল তাই এজবাস্টনের প্রথম দিন ইনিংস ঘোষণা করতে পারে মাত্র ৭৮ ওভার খেলেই। ম্যাককালামও ড্রেসিংরুমে পা দিয়েই অবসরে যাওয়া মইন আলিকে অবসর ভেঙে ফিরে আসার বার্তা পাঠাতে পারেন। ইংল্যান্ড যে নতুন ব্র্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেটটা খেলছে, তা বলা যায় স্টোকস ও ম্যাককালাম দু’জনেরই যৌথ চিন্তার ফসল। তারা জয়-পরাজয় নিয়ে ভাবিত নন। খেলাটা দর্শককে বিনোদিত করতে পারছে কিনা, খেলোয়াড়েরা উপভোগ করছে কিনা; সেটাই হয়ে দাঁড়ায় মূল বিষয়। ইংল্যান্ডের সংবাদ সম্মেলন কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া, সবখানেই আপনি তাদের এই ইতিবাচক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাবেন।

দিন শেষে তাই এই আলোচনা গৌণ হয়ে যায় যে, অ্যাশেজের প্রথম দিনে ইনিংস ঘোষণা করা ঠিক ছিল, নাকি ভুল। ম্যাচের ফলাফল এসেছে, এ ঘোষণায় দর্শক এক জমজমাট ক্রিকেট ম্যাচ উপভোগ করেছে, সেটাকেও ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা যায়। প্রোঅ্যাক্টিভ (ইংল্যান্ড) এবং রিয়্যাক্টিভ (অস্ট্রেলিয়া) ক্রিকেটের যে দ্বৈরথ, সেটাও কিন্তু আনন্দের খোরাক যুগিয়েছে টেস্ট থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া অনেক দর্শককে। দর্শকের কাছে টেস্ট ক্রিকেটটা এখন আর ‘প্রেডিক্টেবল’ না। মাঠে, গ্যালারিতে এই উপভোগের বাতাস বয়ে যাবার কৃতিত্ব নিশ্চিতভাবেই ইংল্যান্ডের ‘বাজবল’। যদিও অনেক সাবেক ক্রিকেটার বা দর্শক এই মানসিকতাকে টেস্ট বিরোধী বলছেন। অনেকের মতে, এভাবে খেলে হয়তো সাময়িক হাততালি পাওয়া যায় কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই পা হড়কাতে হবে। কিন্তু স্টোকস বা ম্যাককালাম হয়তো সেসব মন্তব্যকে ধর্তব্যের মধ্যেই নেবেন না! বদলাবেন না তাদের চিন্তা বা খেলার ধরন।

/এএম                                               


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply