আল মাহফুজ:
সদ্য এজবাস্টন টেস্ট শেষ হয়েছে। এজবাস্টনে হয়ে যাওয়া অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট শেষে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড দুই শিবিরে শুরু হয়েছে কথার লড়াই। তার কেন্দ্রবিন্দু হল ‘বাজবল’। আগেভাগেই প্রথম ইনিংস ঘোষণার কারণে ইংল্যান্ড পরাজয় বরণ করলো কি না, সেই আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
সাবেক ক্রিকেটাররাও পিছিয়ে থাকেননি কথার তুবড়ি ছোটানো থেকে। স্টোকস যখন আকস্মিক এই ইনিংস ঘোষণা করেন, তখনও দিনের খেলা বাকি ১২ ওভার। আর ১১৮ রানে অপরাজিত ছিলেন জো রুট। ইংলিশদের হাতে তখনও দুই উইকেট অবশিষ্ট।
এই প্রোঅ্যাক্টিভ ক্রিকেট ইংল্যান্ডের জন্য অতিরিক্ত সাহসী হয়ে যাচ্ছে নাকি বাজবল প্রক্রিয়াতেই গড়াবে ভবিষ্যৎ, সেই আলোচনা চলছে সবখানে।
২০২২ সালের ১২ মে ইংল্যান্ডের প্রধান কোচ করা হয় কিউই তারকা সাবেক ক্রিকেটার ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে। অধিনায়কত্বের দায়িত্ব তুলে দেয়া হয় বেন স্টোকসকে। ম্যাককালাম এর আগে ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে কোচিং করিয়েছেন। সেখানে তিনি স্বাক্ষর রাখেন তার ক্রিকেটীয় দর্শনের। ম্যাককালামের ক্রিকেটীয় দর্শন হচ্ছে অতি আক্রমণাত্মক ক্রিকেট। অধিনায়ক বেন স্টোকসের দর্শনও অনেকটা এরকম। তারা দু’জন মিলে টেস্ট ক্রিকেটে চালু করে এক নতুন ‘ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট’। ভয়ডরহীন আক্রমণাত্মক মানসিকতার ইংল্যান্ডের এই খেলার ধরনকে নাম দেয়া হয় ম্যাককালামের ডাকনাম ‘বাজ’ থেকে। শুরু হয় ‘বাজবল’ ক্রিকেট।
২০২৩ অ্যাশেজের আগে ম্যাককালাম-স্টোকস জুটির অধীনে ইংল্যান্ড ১৩টি টেস্ট খেলে জয় পায় ১১টিতে এবং ড্র হয় একটিতে। শুধু বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তোলা কিংবা ‘ব্রামবেলা’ ফিল্ড সেটআপ করে বিপক্ষকে হড়কে দেয়া নয়, বাজবল মানে দর্শকদের বিনোদন দেয়া। বাজবল মানে দলের মানসিকতায় আক্রমণাত্মক ছাপ থাকা। বাজবল মানে প্রতিটা বলে কিছু না কিছু ঘটার সম্ভাবনা তৈরি করা। বাজবল দর্শককে মুগ্ধ করছে, দর্শকের কাছে টেস্ট ক্রিকেটটা এখন আর একঘেয়ে লাগছে না। আলোচনা উঠেছে, টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যত কি এই বাজবল?
বর্তমানে টি-টোয়েন্টি ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের যে জোয়ার, তা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। ফ্র্যাঞ্চাইজির সময়কাল ধীরে ধীরে বাড়ছে। যার ফলে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সংখ্যাও কমে এসেছে। ব্যাটার, বোলাররা আরও বেশি আক্রমণাত্মক হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে কিছু না কিছু করার মানসিকতা এসেছে খেলোয়াড়দের।
এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচের ভবিষ্যৎ কী? অনেকের মতে, বাজবল ক্রিকেটই ভবিষ্যতে টেস্ট ক্রিকেটে রাজত্ব করবে। বাজবল টেস্টে রোমাঞ্চকর ফলাফল উপহার দেয়, ম্যাড়ম্যাড়ে ড্র হবার আশঙ্কা থাকে না এতে। ক্রিকেটারদের পরিবর্তিত মানসিকতার সাথে তা খাপ খায়। বাজবল দর্শকের চাহিদাও পূরণ করে।
ইতোমধ্যে বাজবলের পক্ষে কিছু দৃষ্টান্ত দৃশ্যমানও। টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড ও বাংলাদেশের নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিংয়ে ভূমিকা দেখলে বোঝা যায়, কোচ তাদের ওপর প্রোঅ্যাক্টিভ ক্রিকেটের দায়িত্ব দিয়েছেন। তারা উইকেটে গিয়ে পাল্টা আক্রমণ শানাচ্ছেন, যা বিপক্ষের অধিনায়কের পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করছে। কিছুদিন পূর্বেও দলগুলোতে এমনটা দেখা যেত না। বর্তমানে অনেক কোচকেই একাদশ, স্ট্র্যাটেজি সাজাতে দেখা যাচ্ছে ‘বাজবল’ কায়দায়।
ইংল্যান্ডের এই ইতিবাচক ক্রিকেট যে ধীরে ধীরে সবাইকে প্রভাবিত করছে, তা টের পাওয়া যাচ্ছে। আর মনে করা হচ্ছে, ভবিষ্যতের টেস্ট ক্রিকেট টিকে থাকবে উত্তেজনাপূর্ণ এই বাজবলেই।
/এএম/এমএন

