জমি নিয়ে বিরোধে আ. লীগ নেতার পিস্তল উঁচিয়ে গুলি, আটক ৪

|

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী

নরসিংদীর শিবপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ সময় টাকশাল (এক ধরনের চাপাতির ন্যায় অস্ত্র) দিয়ে তিনজনকে কুপিয়ে আহত করেন অভিযুক্ত ওই আওয়ামী লীগ নেতার লোকজন।

শনিবার (১ জুলাই) দুপুরে শিবপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ১১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

আহতরা হলেন, পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পাড়া এলাকার আকবর আলীর সোহেল মিয়া (৩৬), নাইমুল হাসান অপি (২৪) ও সেকান্দর আলীর ছেলে আরিফ মিয়া (২৮)। তাদের তিনজনকেই শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম ভূইয়া (৪০) শিবপুর পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ৪নং ওয়ার্ডের আব্দুর রহমানের ছেলে। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিদেশি পিস্তলসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।

এলাকাবাসী জানায়, শিবপুর পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য পরিচয় ব্যবহার করে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়া মামলার বাদী হয়েছিলেন সেলিম। তবে তার সঙ্গে পৌর আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন শিবপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক খান।

পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা জানান, দুই বছর আগে পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পাড়া এলাকায় পৌনে ১০ শতাংশ জমি কেনেন সোহেল মিয়া। কিছুদিন পরই ওই জমির পাশে প্রায় ৩০ শতাংশ নিচু জমি কেনেন অভিযুক্ত সেলিম ভূঁইয়া। জমি উঁচু করার জন্য মাটি ফেলতে গিয়ে সোহেলের জমির কিছু অংশও ভরাট হয়ে যায়। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখালে সেলিম তখন মাটি সরিয়ে নেয়ার কথা বলেছিলেন কিন্তু এখন পর্যন্ত মাটি সরিয়ে নেননি তিনি।


যমুনা টেলিভিশনের সবশেষ আপডেট পেতে Google News ফিড Follow করুন।

ভুক্তভোগী সোহেল মিয়া বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সেলিম ভূঁইয়াকে কাছে পেয়ে নিজের জমিতে চারা রোপণের পরিকল্পনার কথা জানায় আমি। চারা লাগাতে হলে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানান সেলিম। তার কথায় রাজি না হয়ে শনিবার দুপুর ১২টার পরপর আমি কিছু চারা কিনে নিয়ে নিজের জমিতে রোপণ করতে শুরু করি। কিছু চারা রোপণের পর সেলিম ভূঁইয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাকে গালিগালাজ ও চারাগুলো উপড়ে ফেলেন। এ সময় আমাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার হুমকি দেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনা জানাজানি হলে আমার পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সেলিম একটি বিদেশি পিস্তল ও তার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন টাকশাল নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেন এবং গুলি করেন।

এই ঘটনায় স্থানীয় লোকজন সেলিমের বাড়ি ঘিরে রেখে শিবপুর থানা-পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার ফোর্স নিয়ে ওই বাড়িতে অভিযান চালান। পরে বাড়িটির একটি আলমারির ভেতরে লুকিয়ে রাখা অবস্থায় বিদেশি পিস্তলসহ সেলিম ভূঁইয়াকে আটক করে পুলিশ। এ সময় বাড়িটির ভেতর থেকে আরও তিনজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

মো. সোহেল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, সেলিম ভূঁইয়ার তার হাতে থাকা ওই পিস্তল দিয়েই দুটি গুলি করেছেন। ভাগ্য ভালো গুলি কারো শরীরে লাগেনি। গুলি না লাগায় টাকশাল দিয়ে আমাদের তিনজনকে কুপিয়েছে তারা। আমরা তিনজনই পরে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছি। এর আগেও কথায় কথায় পিস্তল বের করে গুলি করার ভয় দেখাতেন সেলিম ভূঁইয়া।

শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, ঘটনাস্থলে দুই রাউন্ড গুলি করেছেন সেলিম ভূঁইয়া। সেলিমের কাছ থেকে মেড ইন সিঙ্গাপুরের একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। ওই বাড়ি থেকে সেলিম, হাসান, হিরণ ও কাউসার নামের চার ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply