কথায় আছে উপহার ফেরত নিতে হয় না। কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে উপহার দেয়া হাতি ফিরিয়ে নিয়েছে থাইল্যান্ড। দীর্ঘ ২২ বছর আগে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো প্রাণীটির সাথে হওয়া অবিচার দেখে, বাধ্য হয়েই এই পদক্ষেপ নিয়েছে থাই কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে রীতিমতো কূটনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয় দু’দেশের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত থাইল্যান্ডের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শ্রীলঙ্কায় মুথু রাজা নামে ডাকা হাতিটিকে ফেরত পাঠানো হয়। রাজকীয় অভ্যর্থনায় সেটিকে স্বাগত জানায় থাইরা। সূত্র: রয়টার্স, এপি।
রোববার (২ জুলাই) কার্গো বিমানে করে নিজ দেশে ফেরার পর জলজ অভ্যর্থনায় স্বাগত জানানো হয় হাতি মুথু রাজাকে। থাইদের কাছে অবশ্য তার নাম সাক সুরিন। কলম্বো থেকে ছয় ঘণ্টার যাত্রা শেষে অসুস্থ মুথু রাজা পৌঁছায় থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই প্রদেশে। পৌঁছানোর পরেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সরকারি হাতি সংরক্ষণ কেন্দ্রে। সেখানেই দেয়া হবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা। রাখা হবে ত্রিশ দিনের কোয়ারেন্টাইনে।
হাতিটির ব্যাপারে শ্রীলঙ্কার পশু চিকিৎসক মধুধা পেরেরা বলেন, তার পায়ের জয়েন্টে সমস্যা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটা কয়েকদিন আগের কোনো ইনজুরি। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে অনেক বছর ধরেই নাকি তার পায়ের এই সমস্যা। এ কারণে সে ঠিকমত হাঁটতে পারছে না। আশা করি চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত সে সুস্থ হয়ে উঠবে।
২০০১ সালে থাই রাজপরিবারের পক্ষ থেকে শ্রীলঙ্কাকে উপহার দেয়া হয় ৭ বছর বয়সী সাক সুরিনকে। শ্রীলঙ্কার একটি বৌদ্ধমন্দিরে রাখা হয় পরাণিটিকে। ব্যবহার করা হতো ধর্মীয় নানা আচার অনুষ্ঠানে। অংশ নিতো মন্দিরের নানা প্যারেডেও।
কিন্তু অভিযোগ ওঠে প্রাণীটিকে নির্যাতনের। স্থানীয়রা জানায়, বেশি টাকার আশায় মন্দির কর্তৃপক্ষ হাতিটিকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করাতো। দেয়া হতো না পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও সেবা। মন্দিরের প্যারেড ছাড়াও পর্যটনের কাজে তাকে ব্যবহার করা হতো। বিষয়টি একটি প্রাণী অধিকার সংরক্ষণ সংস্থার নজরে আসে। তদন্তে শরীরে মেলে আঘাতের চিহ্ন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতেই কয়েক মাস আগে মন্দির থেকে সরিয়ে আনা হয় সুরিনকে। রাখা হয় চিড়িয়াখানায়।
প্রাণী অধিকার সংরক্ষণ সংস্থার পরিচালক পাঞ্চালি পানাপিতিয়া বলেন, ২০২০ সাল থেকে আমরা মুথু রাজাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ, জাতীয় প্রাণী উদ্যান, বন্যপ্রাণী মন্ত্রণালয় সবার সাথে যোগাযোগ করি। কারণ সে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। তার জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে অবশেষে থাই সরকারের সাথে যোগাযোগ করি।
বিষয়টি থাই সরকারের নজরে আসলে শুরু হয় দু’দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়ন। শ্রীলঙ্কাকে অনুরোধ করে নিজেদের পাঠানো উপহার ফেরত দেয়ার। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে হাতিটির দুরবস্থার জন্য। ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অবশেষে প্রার্থনার মাধ্যমে ২৯ বছরের মুথু রাজাকে বিদায় দেয় শ্রীলঙ্কার প্রাণী অধিকার কর্মীরা। রাজার মতো জাঁকজমকভাবে জানানো হয় বিদায়। হাতিকে পবিত্র হিসেবে দেখা থাইরা। মুথু রাজাকে ফেরত নিতে ব্যয় করে ৭ লাখ ডলার।
এটিএম/
Leave a reply