বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক নক্ষত্রের পতন

|

ছবি: সংগৃহীত

২২ গজের ক্রিজে প্রতিপক্ষ বোলারদের উপর শাসন করা বাংলাদেশি ব্যাটারদের অন্যতম তামিম ইকবাল। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা হাঁকানো থেকে শুরু। লর্ডসের অনার্স বোর্ডে সেঞ্চুরি করে নাম তোলার মাধ্যমে সব ফরম্যাটেই নিজের সামর্থ্যের জানান দেয়া। বোলারদের চোখে চোখ রেখে সাহসিকতা দেখানো- সবকিছুই তামিম ইকবালের স্বাতন্ত্র্যের বহিঃপ্রকাশ। পরিশেষে ,আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক নক্ষত্রের পতন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন দেশসেরা এই ওপেনার।

আজ (৫ জুলাই) চট্টগ্রামের হোটেল টাওয়ার ইনে ব্যক্তিগতভাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকে অবসরের ঘোষণা দেন টাইগারদের সদ্য সাবেক এ ওয়ানডে অধিনায়ক।

সংবাদ সম্মেলনে আবেগাক্রান্ত তামিম ইকবাল বলেন, আমি সব সময় বলি, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য। আমি নিশ্চিত নই, আমার ১৬ বছরের এই ক্যারিয়ারে তাকে কতটা গর্বিত করতে পেরেছি। আরও অনেকেই আছেন যাদের আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার ছোট চাচা আকবর খান ইন্তেকাল করেছেন। তার হাত ধরেই আমার প্রথম ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট খেলা। আমি তাকেও ধন্যবাদ জানাই।

তামিম ইকবাল বলেন, আমার আজ সত্যিকার অর্থে বেশি কিছু বলার নেই। একটি কথা আমি অবশ্যই বলবো, আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়েই চেষ্টা করেছি। হয়তো আমি যথেষ্ট ভালো করতে পারিনি। তবে, যখনই মাঠে থেকেছি, আমার শতভাগ দেয়ার চেষ্টাই করেছি।

ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কেনিয়ার বিপক্ষে দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজের ঘরের মাঠে এই ফরম্যাটেই তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেন তামিম।

২৪১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬.৬২ গড়ে ৮৩১৩ রান করেছেন, সেঞ্চুরি ১৪টি, ফিফটি ৫৬টি। টেস্টে ৭০ ম্যাচে ৩৮.৮৯ গড়ে ৫১৩৪ রান করেছেন তামিম। সেঞ্চুরি ১০টি ও ফিফটি ৩১টি। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি করেছেন তামিম।

টি–টোয়েন্টিতে ৭৪ ম্যাচে ১৭০১ রান করেছেন তামিম। এই ফরম্যাটে দেশের হয়ে শুধু তামিমই সেঞ্চুরি করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫ সেঞ্চুরি করা তামিম তিন ফরম্যাটে মিলিয়ে ১৫ হাজারের বেশি রান করেছেন। দেশের আর কোনো ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এতো রান করতে পারেননি।

তবে তামিম ইকবাল হয়তো কেবল পরিসংখ্যানের পাতায় আটকে থাকার ক্রিকেটার নন। এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আহত হয়ে মাঠের বাইরে যাওয়ার পর ৯ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছে বাংলাদেশ, আর মুশফিকুর রহিম সঙ্গীর অভাবে দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে, তখন গ্লাভস কেটে ভাঙা আঙুল নিয়ে মাঠে নেমে তামিম ব্যাট করেছেন এক হাতে। আর অন্যপ্রান্তে ঝড় তোলার সুযোগ পেয়েছেন মুশফিক। করেছেন সেঞ্চুরি। দল পেয়েছে জয়। সেই ম্যাচের স্কোরকার্ডে তামিমের ন্যূনতম রানই হয়তো লেখা থাকবে। কিন্তু ভাঙা আঙুল নিয়ে ব্যাট করতে নেমে যে সাহস তিনি সঞ্চারিত করেছিলেন পুরো দলের ভেতর, তা আসবে না কোনো পরিসংখ্যান বইয়ে। এর সাক্ষী থাকবে কেবল মহাকাল।

/আরআইএম/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply