বাংলাদেশের ক্রিকেটে উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম তামিম ইকবাল খান। ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ হয়েছে বিভিন্ন অর্জন ও রেকর্ডে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দেশের ক্রিকেটে অবদান রেখেছেন এই ওপেনার। তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড তামিমের দখলে। পাশাপাশি তিন ফরম্যাটে সর্বাধিক সেঞ্চুরির মালিকও চট্টগ্রামের এই ওপেনার।
ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক মঞ্চে যখন পা রেখেছিলেন; তখন বয়স ১৮ ছুঁইছুঁই। কৈশোরের গণ্ডি পেরিয়ে তখন তারুণ্যের খাতায় নাম লেখানোর অপেক্ষায় তামিম ইকবাল খান। ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হয় বাঁহাতি এই ওপেনারের। টাইগারদের ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক জয় আর অর্জনের স্বাক্ষী তামিম।
অভিষেকের বছরেই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ পেয়ে যান বাঁহাতি এই ওপেনার। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে অগ্নীমূর্তির তামিম নিজের জাত চেনান। জহির খান, অজিত আগারকার, মুনাফ প্যাটেলদের শাসন করেন ব্যাটের ঝলকানিতে। জহির খানের বলে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে এসে মারা ওভার বাউন্ডারি এখনো জ্বলজ্বল করছে ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে। তামিমের অনবদ্য অর্ধশতকের দিনে ভারত বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকেই।
২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডস টেস্ট তামিমের ক্যারিয়ারে স্মরণীয় হয়ে আছে। সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫৫ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বসেন এই ওপেনার। ম্যাচটি বাংলাদেশ ৮ উইকেটে হারলেও অন্যরকম আনন্দে ভেসেছিলেন তামিম ইকবাল। অসামান্য শতকের জন্য লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম উঠে তার। যেখানে নিজের নাম তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন শচীন টেন্ডুলকারের মতো কিংবদন্তি। তামিমের বিদায় বেলায় তাকে অভিন্দন জানিয়েছে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড।
২০১৫ সালে ব্যাট হাতে খারাপ সময় যাচ্ছিল তামিমের। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি ছিলেন বিশ্বকাপেও। সেই বছরেই বাংলাদেশ সফরে আসে পাকিস্তান। খোলস খুলে বেড়িয়ে আসেন তামিম। টানা দুই ম্যাচে দেখা পান সেঞ্চুরির। ১৩২ ও ১১৬ রানের ইনিংস খেলে আরও একবার প্রমাণ করেছিলেন নিজেকে।
তবে তামিম ইকবাল হয়তো কেবল পরিসংখ্যানের পাতায় আটকে থাকার ক্রিকেটার নন। ২০১৮ সালে এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কান পেসার সুরাঙ্গা লাকমালের শর্ট বলে আহত হয়ে মাঠের বাইরে যাওয়ার পর ৯ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছে বাংলাদেশ, আর মুশফিকুর রহিম সঙ্গীর অভাবে দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে, তখন গ্লাভস কেটে ভাঙা আঙুল নিয়ে মাঠে নেমে তামিম ব্যাট করেছেন এক হাতে। আর অন্যপ্রান্তে ঝড় তোলার সুযোগ পেয়েছেন মুশফিক। করেছেন সেঞ্চুরি। দল পেয়েছে জয়। সেই ম্যাচের স্কোরকার্ডে তামিমের ন্যূনতম রানই হয়তো লেখা থাকবে। কিন্তু ভাঙা আঙুল নিয়ে ব্যাট করতে নেমে যে সাহস তিনি সঞ্চারিত করেছিলেন পুরো দলের ভেতর, তা আসবে না কোনো পরিসংখ্যান বইয়ে। এর সাক্ষী থাকবে কেবল মহাকাল।
/আরআইএম
Leave a reply