শিশুদের চিকিৎসা সেবায় ভয়াবহ এক সংকটে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটিতে দিনদিনই কমছে শিশু বিশেষজ্ঞের সংখ্যা। ডাক্তারের অভাবে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে দেশটিতে। এর বড় কারণ হলো, জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিম্নহার ও শিশু চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে বেতন বৈষম্য। জন্মহার কমে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত কমছে নবজাতকের সংখ্যা। রোগী মিলবে না, এই শঙ্কায় শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহ কমছে চিকিৎসকদের। আর এতেই দেশটিতে শিশুদের চিকিৎসা সেবায় দেখা দিয়েছে এক আশঙ্কাজনক অনিশ্চয়তা। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
দেশটির রাজধানী সিউলেও শিশুদের জন্য একটি বেড কিংবা চিকিৎসকের সিরিয়াল পেতে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। জরুরি সেবার প্রয়োজন হলেও অনেক সময় মেলে না শিশু বিশেষজ্ঞের দেখা। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটতে ছুটতে মৃত্যুও হচ্ছে অনেক শিশুর। তেমনই এক ভুক্তভোগী জানান, হাসপাতালে বেডের জন্য দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছে। লম্বা সিরিয়াল এখানে। বাচ্চা এত অসুস্থ ছিল। খুব ভয় পেয়েছিলাম।
এ বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার চিকিৎসক চোই ইয়ং জে বলেন, জরুরি সেবা পেতে এদিক ওদিক দৌঁড়াতে দৌঁড়াতেই অনেক শিশু মারা যাচ্ছে। খুব সামান্য কারণে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। যা হয়তো ঠেকানো সম্ভব হতো। সার্জারি বিভাগে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও কম। ফলে শিশুদের শতভাগ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভয়াবহ এ পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। সমস্যার মূলে রয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রজনন হার। ২০২২ সালে দেশটির জন্মহার ০.৭৮ এ নেমে এসেছে। জন্মহার কমে যাওয়ায় অনেক চিকিৎসকই ভাবেন, পেশা হিসেবে শিশু বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যৎ নেই।
তাছাড়া দেশটির ২৩টি ক্লিনিক্যাল ডিপার্টমেন্টের মধ্যে শিশু বিশেষজ্ঞদের আয় সবচেয়ে কম। হাসপাতালগুলোতেও শিশুদের চিকিৎসার পেছনে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। তাই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব প্রকট হচ্ছে দিনদিনই।
এ বিষয়ে দেশটির আরেক শিশু চিকিৎসক লিম হিয়ু তে বলেন, শিশু হাসপাতাল পরিচালনায় সরকারের পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। রোগী প্রতি গড়ে মাত্র ১০ ডলার মেলে। যা কখনোই যথেষ্ট নয়।
সরকারের অসহযোগিতার প্রতিবাদে গত মাসেই ‘নো কিডস জোন’ ব্যানারে এক সেমিনার আয়োজন করে দক্ষিণ কোরিয়ার পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে জানানো হয়, সংগঠনটির ৯০ শতাংশ সদস্য শিশুদের চিকিৎসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এ সংগঠনের এক সদস্য বলেন, জন্মহার বাড়াতে সরকার অনেক পদক্ষেপ, অনেক ব্যয় করছে। তার কিছুটা যদি শিশুদের চিকিৎসার পেছনে বরাদ্দ করতো তাহলে অন্তত সন্তানের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বাবা-মায়েরা আশ্বস্ত হতেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শিশু বিশেষজ্ঞ হতে ২০১৩ সালে মোট আসনের বিপরীতে আবেদন পড়ে ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ। যা চলতি বছর নেমে এসেছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশে। অর্থাৎ দিনদিন আরও কমছে শিশু বিশেষজ্ঞের সংখ্যা।
এসজেড/
Leave a reply