ব্যাটিং-বোলিং ব্যর্থতায় দ্বিতীয় ম্যাচেও হেরে সিরিজ খোয়ালো টাইগাররা। চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের কাছে পাত্তাই পায়নি টাইগাররা। ১৪২ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে।
প্রথম ওয়ানডেতে হেরে দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে ছিল না নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এছাড়া, দেশের ক্রিকেট পাড়ায় গত কয়েকদিনের ঘটনায় সবমিলিয়ে কিছুটা হলেও বাড়তি চাপ নিয়ে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। আর এই চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি লিটন বাহিনী।
আফগানদের দেয়া ৩৩২ রান তাড়া করে জিততে হলে বাংলাদেশকে রেকর্ড করতে হতো। এর আগে, সর্বোচ্চ ৩২২ রান তাড়া করে জয় পেয়েছিল টাইগাররা।
পাহাড়সম এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই অসহায় আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। রশিদ-নবিদের তোপে ৭২ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে টাইগাররা। তারপর কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা চলে।
প্রথম ওভারটা ফজলহক ফারুকিকে মেইডেন দিয়ে শুরু করেন নাইম শেখ। দ্বিতীয় ওভারে স্পিন আক্রমণে নিয়ে আসেন আফগান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদি। ওই ওভারে মুজিব উর রহমানকে টানা দুই বাউন্ডারি হাঁকান লিটন। এরপরই অবশ্য বিপদে পড়তে যাচ্ছিলেন। বল প্যাডে লাগলে আফগানদের আবেদনে আঙুল তুলে দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে লিটন সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিয়ে নেন। রিপ্লেতে দেখা যায় বল প্যাডে আঘাত হানার সঙ্গে লেগেছে ব্যাটেও। ব্যক্তিগত ৮ রানের মাথায় বেঁচে যান লিটন। তবে সেই জীবন কাজে লাগাতে পারেননি।
আফগান পেসার ফারুকিকে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ১৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে তিনি করেছেন ১৩ রান।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন ১ রান করেই। মুজিব উর রহমানের ঘূর্ণি বল বুঝতে না পেরে স্টাম্প উড়ে যায় শান্তর। ২৭ বলে ৯ করেন দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা নাইম শেখ, তার স্টাম্প উড়িয়েছেন ফারুকি। ২৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ।
অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান আর তরুণ তাওহিদ হৃদয় সেই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ৫০ বলে তাদের ৪০ রানের জুটিতে ভাঙন ধরান রশিদ খান নিজের প্রথম ওভারেই। তার দুর্দান্ত গুগলি বুঝতে না পেরে বোল্ড হন হৃদয়। ৩৪ বলে ২ বাউন্ডারির সাহায্যে ১৬ রান করেন তিনি।
চাপের মুখে সাকিব খেলছিলেন দায়িত্ব নিয়েই। কিন্তু ১৮তম ওভারে আম্পায়ার্স কলে ফিরতে হয় তাকে। মোহাম্মদ নবির বলে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন হলে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায় বল প্রায় লেগস্টাম্প বেরিয়েই যেতো, একটুখানি পেয়েছে। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে আউট হয়। ২৯ বলে ৩ চারে সাকিবের ইনিংসটি ছিল ২৫ রানের।
পরের ওভারে ‘গোল্ডেন ডাক’ আফিফ হোসেন ধ্রুবর। রশিদ খানের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। সপ্তম উইকেটে মুশফিকুর রহিম আর মেহেদি হাসান মিরাজ ১০৮ বলে ৮৭ রানের লড়াকু এক জুটি গড়েন। তাদের এই জুটিতে ব্যবধানের হার কমে। শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভাঙেন মুজিব। আফগান অফ স্পিনারকে তুলে মারতে গিয়ে লংঅনে ক্যাচ হন মিরাজ। ৪৮ বলে তার ২৫ রানের ইনিংসে ছিল ২টি বাউন্ডারি।
আর মুশফিক শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন ৬৯ রান করে, ফারুকির শিকার হয়ে। ৮৫ বলের ইনিংসে ৬টি বাউন্ডারি হাঁকান মুশফিক। ৪৩.২ ওভারে ১৮৯ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। চোটের কারণে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি এবাদত হোসেন।
আফগানিস্তানের ফজলহক ফারুকি আর মুজিব উর রহমান নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। আর রশিদ খান নিয়েছেন ২টি উইকেট।
এর আগে, টাইগারদের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে শতক হাঁকিয়ে প্রথম ব্যাটার হিসেবে যখন সাজঘরে ফিরছেন রাহমানুল্লাহ গুরবাজ, ততক্ষণে আফগানিস্তানের স্কোর ৩৬.১ ওভারে ২৫৬ রান!
এরপর নিয়মিত উইকেট পতনের সাথে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আফগানিস্তানের স্কোরবোর্ডকে ৩৩১-এর মধ্যে আটকে রাখে লিটন দাসের দল।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই আফগান ওপেনার রাহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইবরাহিম জাদরান। শুরুতে জাদরান একটু ধীরগতিতে খেললেও বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন আরেক ওপেনার গুরবাজ। যার ফলে ম্যাচের ১৪ ওভারের মাথায় মূল পাঁচ বোলারকেই আক্রমণে আনতে বাধ্য হন এই ম্যাচে নেতৃত্ব দেয়া লিটন কুমার দাস। কিন্তু দলকে উইকেট এনে দিতে পারেননি কোনো বোলারই।
১৩তম ওভারে সাকিব আল হাসানকে বাউন্ডারি মারার পরের বলেই ছক্কা মেরে ফিফটি তুলে নেন গুরবাজ। এরপর মাঠের চারপাশে বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারির পশরা সাজিয়ে বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপকে অসহায় দর্শক বানিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরির দেখা পান ডানহাতি এই ওপেনার ব্যাটার। ১০০ বলে ৮টি চার ও ৬টি ছক্কার সাহায্যে ম্যাজিকাল ফিগার স্পর্শ করেন এই আফগান ব্যাটার। গুরবাজের এই ঝড়ের তীব্রতা আরও বাড়ে সেঞ্চুরির পর। বিনা উইকেটেই ৫০ ওভার খেলে ফেলে কিনা, সেই শঙ্কা যখন জাগতে যাচ্ছে তখনই বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন সাকিব আল হাসান। এই তারকা অলরাউন্ডারের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ১৩টি ৪ ও ৮টি ছয়ের সাহায্যে ১২৫ বলে ১৪৫ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন গত আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলা গুরবাজ।
এক প্রান্তে ইবরাহিম জাদরান ছিলেন। কিন্তু অপর প্রান্তে একের পর এক উইকেটের পতন ঘটায় বাংলাদেশ। আফগানদের রানের ঝড়ো গতিও কমে আসে। পরবর্তী ৫০ রানে ৬ ও ৬৩ রানে আফগানদের ৮ উইকেটের পতন ঘটে। এর মাঝেই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন অনেকটা সময় গুরবাজের ছায়া হয়ে থাকা জাদরান। শতক পূর্ণ করার পরই মোস্তাফিজের শিকার হন এই ডানহাতি ওপেনার। শেষ ১৪ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৭৫ রান তুলতে পেরেছে আফগানরা। সাকিব আল হাসান, মেহেদী মিরাজ, হাসান মাহমুদ ও মোস্তাফিজুর রহমান পেয়েছেন ২টি করে উইকেট।
গুরবাজ ও জাদরানের ব্যাটে আজ হয়েছে রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলা। তাদের ২৫৬ রানই আফগানিস্তানের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ জুটি। তাছাড়া, একই ম্যাচে দুই আফগান ওপেনারের শতক হাঁকানোর ঘটনাও এটিই প্রথম। দলীয় সংগ্রহের দিক দিয়েও ৩৩১ আফগানিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ। তাছাড়া, রাহমানুল্লাহ গুরবাজের ১৪৫ রান আফগানিস্তানের পক্ষে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস।
চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বৃষ্টি আইনে হারে টাইগাররা।
/এমএন
Leave a reply