৩০০ বছরের পুরনো একটি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে ইরাকে। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বসরায় রাস্তা সম্প্রসারণের অজুহাতে ভেঙে ফেলা হয় সিরাজি মসজিদ ও বিখ্যাত নীল মিনার। ঐতিহ্যবাহী মিনার ধ্বংসের সমালোচনা করছে দেশটির সুন্নি কমিটি ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে সেখানকার বাসিন্দারাও। খবর রয়টার্সের।
ঐতিহাসিক সিরাজি মসজিদের মূল আকর্ষণই ছিল ১১ মিটার দীর্ঘ মিনারটি। বাদামি ইটে তৈরি, উজ্জ্বল পাথরে সাজানো বিখ্যাত এই নীল মিনার তৈরি হয়েছিল ১৭২৭ সালে।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয় মিনারটি। সড়কের মাঝে বাধা তৈরি করছে এমন দাবিতে ভেঙে ফেলা হয় ঐতিহাসিক এই স্থাপনা।
এ নিয়ে এক বাসিন্দা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, সব জাতিই তাদের ঐতিহ্য রক্ষা করে। আর এখানে কী হচ্ছে? ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধ্বংস করা হচ্ছে। এখানে নাকি ট্রাফিকের চাপ! যেহেতু মসজিদ আগে তৈরি হয়েছে, তাই এটাকে রক্ষা করে বিকল্প ভাবা উচিত ছিল।
প্রাচীন মসজিদ ধ্বংসে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশটির সুন্নি কমিটি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দাবি, চুক্তি ভেঙে হুট করেই মসজিদ ভেঙে ফেলেছে প্রশাসন।
এ নিয়ে সুন্নি এনডোমেন্ট ডিরেকটোরেটের প্রধান মোহাম্মদ মুনলা বলেন, এ বিষয়ে কি কিছুই ভাবেনি সরকার? কখনও ভাবতে পারিনি মিনারটি এভাবে গুড়িয়ে দেয়া হবে। কারণ সরকারের সাথে একমত হয়েছিলাম, তুরস্ক থেকে বিশেষজ্ঞ দল আনিয়ে মিনার ভাঙা হবে।
বসরার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান মুস্তাফা আল হুসাইনি বলেন, আমাদের কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, মিনারটি তিন টুকরো করে সরানো হবে। নতুন মসজিদের সামনে বসানো হবে। কিন্তু এটা কী হলো? এখন ভাঙা টুকরো সংগ্রহের চেষ্টা করছি আমরা।
অবশ্য মসজিদ ভাঙার সিদ্ধান্তের পদক্ষেপের পক্ষেই সাফাই গাইছে প্রশাসন। তাদের দাবি, এক বছর সময় দেয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সুন্নি কমিটি বা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।
বসরার গভর্নর আসাদ আল এদানির দাবি, আমরা দেড় বছর অপেক্ষা করেছি। এটা ভাঙা ও আরেকটি নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য। ভাগে ভাগে মিনারটি সরানোর জন্যও বলা হয়েছিল। তারা ব্যবস্থা নেয়নি। এক সপ্তাহ আগেও সুন্নি কমিটিকে জানিয়েছি, আধুনিক উপায়ে ভাঙা হবে মসজিদটি।
মূলত প্রাচীন মেসোপটেমিয় সভ্যতার কেন্দ্র ইরাকের হাজার হাজার বছরের পুরোনো বহু নিদর্শন ধ্বংস হয় আইএস এর আক্রমণে। যেগুলো টিকে আছে তা সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়ার দাবি স্থানীয়দের। তবে বাগদাদে বহুতল ভবন, রাস্তা, সেতুসহ অবকাঠামো নির্মাণের যে হিড়িক তৈরি হয়েছে, তাতে ধ্বংস হতে পারে আরও অনেক নিদর্শন-এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে দেশটির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।
এসজেড/
Leave a reply