রাজিব আহমেদ:
প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়েছে জমি নিবন্ধনের কর। ফলে জমির হাতবদল আগের চেয়ে অনেক কম হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের শঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে অনেকেই জমি না কিনে দেশের বাইরে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য করের হার সহনীয় পর্যায়ে আনার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
জমি নিবন্ধনের ফি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হলেন সাইফুল ইসলাম। রাজধানীর বাড্ডা থানার বেরাইদ মৌজার ৬ কাঠা জমি নিবন্ধনের জন্য সাব রেজিস্ট্রার অফিস ঘুরছেন তিনি। নিবন্ধন ফি দেখে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় তার। কাঠা প্রতি কেনার খরচ মৌজা ভেদে যেখানে সাড়ে তিন লাখ টাকায়, সেখানে ওই জমির নিবন্ধনেই লাগছে আট লাখ টাকা। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এটি মধ্যবিত্তদের জন্য খুবই বড় একটি সমস্যা। ফলে এই বিষয়টির দিকে সরকারের আরও আন্তরিক দৃষ্টি দেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
চলতি মাস থেকে জমি রেজিস্ট্রেশন ফি দ্বিগুণ করায় এমন বিড়ম্বনায় পড়েছেন আরও অনেক ক্রেতা। আয়কর বিধিমালার ৬ ধারায় বলা আছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি নিবন্ধন কর ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলাকায় সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকা ও জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভায় ওই কর ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।
পাশাপাশি দেশের যেকোনো পৌরসভার আওতাধীন সম্পত্তি কর ২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ এবং বাকি এলাকাগুলোতে ১ শতাংশ থেকে কর বাড়িয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন মৌজার জমির চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশ কিংবা এলাকাভিত্তিক কাঠা প্রতি নূন্যতম কর র্নিধারণ করা হয়েছে।
নিবন্ধন ফি বেড়ে যাওয়ায় নিবন্ধনের সংখ্যাও কমে গেছে। সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে আগের মতো ভিড়ও নেই। তাই অলস সময় কাটান দলিল লেখকরা।
এ বিষয়ে দলিল লেখক জয়নাল আবেদীন বলেন, এখন নিবন্ধন ফির যে নিয়ম করা হয়েছে তাতে মানুষের ভোড়ান্তি বেড়েছে। ফলে আগের মতো রেজিস্ট্রি অফিসে ভিড়ও নেই।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, জমি রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ার আবাসন খাতেও প্রভাব পড়বে। এতে ক্রেতা হারানোর পাশাপাশি অর্থপাচারের শঙ্কার জানিয়ে আবাসন খাত বিষয়ক এফবিসিসিআই’র চেয়ারম্যান লিয়াকত আলি ভূঁইয়া বলেন, রেজিস্ট্রেশন ফি যে হারে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তাতে ফ্ল্যাট কেনা-বেচা মোটামুটি বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে যাবে। অন্যদিকে বাড়ি বা জমি ক্রয় করতে গিয়ে এমন আকাশচুম্বী রেজিস্ট্রেশন ফি দেখে অনেকেই বিদেশে টাকা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। এতে অনেক টাকা বাইরে বেরিয়ে যাবে। আবার এমন অনেক খাতে বিনিয়োগ হবে, যেখানে বিনিয়োগ আমরা চাই না।
এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন বলেন, নিবন্ধন কমে গেলে কর আদায়ও কমবে। তাই এই সিদ্ধান্ত পুনঃর্বিবেচনা করা উচিত সরকারের। এ ক্ষেত্রে স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা করা উচিত। পরে পর্যায়ক্রমে নিবন্ধন ফি বাড়ানো যেতে পারে, তবে একবারে একটা নয়।
জমি নিবন্ধন ফি বৃদ্ধির ফলে হুমকির মুখে পড়েছে মধ্যবিত্তের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। সাধারণ মানুষের চাওয়া, সীমিত আয়ের মানুষদের কথা চিন্তা করে নতুন করে বিন্যাস করা হোক কর কাঠামো।
এসজেড/
Leave a reply