এল ক্লাসিকো থেকে যেসব দিক খুঁজে নিতে পারে বার্সা

|

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে তৃতীয় এল ক্লাসিকো দেখেছে বিশ্ব। এর আগের দুটোর মতো এবারও জয় পেয়েছে বার্সেলোনা। টেক্সাসের আর্লিংটনের এটি অ্যান্ড টি স্টেডিয়ামে ৮২ হাজার ২৬ জন দর্শকের সামনে এই প্রীতি ম্যাচে দুই দলেরই আক্রমণের প্রাবল্য বলে দেয়, এল ক্লাসিকর পক্ষে বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে থাকাটা কেবল কঠিন নয়, অনেকটা অসম্ভবই বটে! মূলত ফিনিশিংয়ে মুনশিয়ানা দেখিয়েই রিয়ালের উপর ছড়ি ঘুরিয়েছে জাভির দল। লস ব্লাঙ্কোসদের উড়িয়ে দিয়েছে ৩ গোলে। প্রাক মৌসুমে এটি ছিল বার্সেলোনার দ্বিতীয় ম্যাচ। সেই হিসেবে এ ম্যাচ থেকে ইতিবাচক অনেক কিছুই খুঁজে পেতে পারে বার্সা।

মিডফিল্ডে গুন্দোয়ানের আধিপত্য

বয়স বাড়ার সাথে সাথে যেন আরও ক্ষুরধার হচ্ছে ইলকায় গুন্দোয়ানের পারফরমেন্স! ম্যান সিটির হয়ে ঐতিহাসিক ট্রেবল জয়ে নেতৃত্ব দেয়ার পর বার্সায় এসেছেন এই মিডফিল্ডার। ব্লাউগ্রানাদের জার্সিতে সিটির সাফল্য টেনে আনতে পারবেন কিনা, সেই সংশয়কে এই ম্যাচের পর অনেকটাই উড়িয়ে দিয়েছেন এই জার্মান।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে বল দখলের লড়াইয়ে তিনি ঠান্ডা মাথায় দিয়েছেন নেতৃত্ব। পাসিং এবং বল ছাড়া মাঠে তার জায়গা পরিবর্তনে বেশ কয়েকবারই খেই হারিয়েছে রিয়াল। যতক্ষণ মাঠে ছিলেন গুন্দোয়ান, পারফরমেন্সে মনে হতেই পারে তিনি যেন বার্সায়ই কাটিয়েছেন পুরো ক্যারিয়ার! মাঝমাঠে ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ংয়ের সাথে গুন্দোয়ানের যুগলবন্দী ছিল বার্সার জন্য অন্যতম প্রাপ্তি। এই দুইজনই একে অপরকে রক্ষণ থেকে আক্রমণে ওঠার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। ইনজুরিতে ম্যাচটি শেষ হয়ে যাওয়াই গুন্দোয়ানের জন্য একমাত্র সেই দিক, যা তিনি মনে রাখতে চাইবেন না।

দুই প্রান্তে আগুনে গতি

আলেহান্দ্রো বালদের মাঝে কেন বিশ্বের সেরা লেফট ব্যাক হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পান অনেকেই, তার একটি প্রামাণ্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে পারে টেক্সাসের এল ক্লাসিকো। বামপ্রান্তে বালদে, ডানে ওসমান ডেম্বেলে- দুই ফ্ল্যাঙ্কে গতির অভাব গোটা ম্যাচে হয়নি কাতালানদের। উল্টো, মাদ্রিদের দুই ফুলব্যাককেও লম্বা সময় ব্যাকফুটেই থাকতে হয়েছে নিজেদের আক্রমণাত্মক প্রবণতা বিসর্জন দিয়ে।

রবার্ট লেভানদোভস্কি, ওরিওল রোমেও এবং পেদ্রি পুরো ম্যাচেই দারুণ খেলেছেন। তবে অসাধারণ গতির জন্য তাদের তেমন নামডাক নেই। জাভির গেম প্ল্যান ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য হয়তো কাতালান ক্লাবটিতে আরও কিছু স্পিডস্টার প্রয়োজন হতে পারে। ডেম্বেলে যদি পিএসজির প্রস্তাব গ্রহণ করেই ফেলে, বার্সাকে সেই ধাক্কা সামলানোর জন্য ভিন্ন পরিকল্পনার দ্বারস্থ হওয়া লাগতে পারে।

রক্ষণে পূর্ণ মার্কস পাওয়া বা না পাওয়া

বার্সা সমর্থকেরা এই ম্যাচে দলটির জমাট রক্ষণ দেখেই হয়তো সবচেয়ে খুশি হয়েছে। ব্যাক ফোরের সাথে বার্সা মিডফিল্ডে এমন কোনো শূন্যস্থান ছিল না যা দিয়ে অনায়াসে গোল করতে পারতো রিয়াল মাদ্রিদ। তবে মাদ্রিদ কম সুযোগও সৃষ্টি করেনি! এর কারণ ছিল বার্সা রক্ষণে হঠাৎ করেই সমন্বয়ের অভাব। আর, ফুটবলে মুহূর্তের ভুলেই নষ্ট হয়ে যেতে বাকি সময়ের সাফল্য।

জাভি হয়তো তার দলের রক্ষণ নিয়ে আরও অনেক কাজই করবেন। প্রথমার্ধে রিয়ালের নেয়া ১৬ শটের পরিসংখ্যানটা ব্লাউগ্রানাদের জন্যও কিছুটা কঠিন।

ফ্র্যাঙ্কি ও টার স্টেগেনের মাস্টারক্লাস

ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ংকে তার অন্যতম সেরা ফর্মে দেখা গেছে এই ম্যাচে। মাঠের প্রতিটি ঘাসেই যেন পড়েছে এই ডাচ মিডফিল্ডারের ছোঁয়া! প্রয়োজনে নিজের পা পেতেও দিয়েছেন, দেখেছেন হলুদ কার্ড। রিয়াল মাদ্রিদের আক্রমণের সুঁতো কেটে দেয়া কিংবা বার্সার আক্রমণের জাল বিছানো, সব জায়গায়ই ছিলেন ফ্র্যাঙ্কি।

গোলবারের নিচে এদিন মার্ক আন্দ্রে টার স্টেগেন এদিন ছিলেন দুর্ভেদ্য এক প্রাচীর। ভাগ্যদেবীকেও যেন বার্সার কথা শোনানোর কাজ করে গেছেন এই জার্মান গোলরক্ষক। রিয়ালের একাধিক শট ফিরে এসেছে বার্সার গোলবার কাঁপিয়ে। বাকিগুলো দায়িত্ব নিজেই পালন করে টার স্টেগেন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, এটি ছিল তার ভাগ্যকে পোষ মানানোর রাত। প্রথমার্ধে রদ্রিগোর ফ্রিকিকসহ রিয়ালের সকল শটেই টার স্টেগেনের পজিশনিং ছিল দুর্দান্ত।

আরও পড়ুন: মার্কিন মুল্লুকে দাপট দেখিয়েও বার্সার কাছে উড়ে গেলো রিয়াল

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply