রিয়াজ রায়হান:
আবারও আলোচনায় এসেছে রাজনীতিবিদদের ওপর পুলিশের হামলা। পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনীতিবিদদের কারণে দীর্ঘকালের উত্তরাধিকার হিসেবেই এমন আচরণ বয়ে বেড়াচ্ছে বাহিনীটি। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে সরকারগুলোর সদিচ্ছার অভাবে ‘আজ্ঞাবহের’ তকমা থেকে বের হতে পারেনি পুলিশ। ভবিষ্যতে এর চড়া মূল্য দিতে হবে বলেও মনে করেন তারা।
প্রায় দু’ দশক আগের ঘটনা, তখন ক্ষমতায় বিএনপি-জামায়াত জোট। আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন বিরোধীদলের সংসদ সদস্যদের মিছিলে পুলিশের বেধড়ক পিটুনিতে রাজপথে রক্তাক্ত হন সাবেক মন্ত্রী সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিমসহ অনেকে।
ক্ষমতার পালাবদলের পরের দৃশ্যে দেখা যায়, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের শুরুর দিকে বিরোধীদলের সংসদ সদস্যদের মিছিলে পুলিশের হামলা। আহত হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য। সবশেষ গেলো শনিবার (২৯ জুলাই) ঘটে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রাস্তায় বেধড়ক পেটায় পুলিশ। স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্র- কোনো আমলেই বদলায়নি পুলিশের এমন আচরণ।
কিন্তু একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির কারণ কী? এ প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, এটার কলোনিয়াল লিগ্যাসি আছে। ব্রিটিশ আমল থেকেই যারা ক্ষমতায় থাকে তারা এবং তাদের সমর্থকরা পুলিশকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে চায়। পুলিশ যাতে বেআইনি কাজ না করে, ক্ষমতার অপব্যবহার না করে, লাইনচ্যুত না হয়ে যায় সেজন্য মনিটর করার একটি সংস্থা থাকা দরকার।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসন তাদের স্বাধীন সত্তা বজায় রাখতে পারেনি। সকল সরকারি বাহিনীর সাথে ক্ষমতাসীন দলের পার্থক্য নাই বললেই চলে। তারা ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে এবং ক্ষমতাসীন দলের অনুগত হিসেবে তারা কাজ করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কখনও রাজনীতিবিদরা, আবার কখনও অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তা পুলিশকে সরকারের আজ্ঞাবহ করে তোলে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের রাজপথে পিটিয়ে আলোচনায় আসেন পুলিশ কর্মকর্তা কোহিনুর মিয়া। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেই দেশ ছাড়েন তিনি। বর্তমানে কয়েক মামলার ফেরারী আসামি এই কোহিনুর। এর ধারাবাহিকতা বজায় থেকেছে পরের সময়টাতেও। সাবেক কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া পুলিশের পক্ষে নিরপেক্ষ আচরণ কঠিন।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সমাবেশের অধিকার, বাকস্বাধীনতা কিংবা গোপনীয়তা রক্ষা করা- এগুলো কিন্তু আমাদের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। এগুলো মানবাধিকারের অংশ। তারা এগুলো লঙ্ঘন করছে। এসবের পরিণতি কিন্তু চরম অমঙ্গলকর। শেষ পর্যন্ত এগুলো কারোরই মঙ্গল বয়ে আনবে না। কারণ, এই পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে অন্যায়ের উপর, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এগুলোর ইতি ঘটবেই একদিন। নইলে বাংলাদেশ ভয়াবহ সংকটে পড়বে।
সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, পুলিশের যে সংস্কার হবে সেটা কিন্তু আগে চাইতে হবে রাজনৈতিক শক্তিকে, যারা ক্ষমতায় থাকে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্তরিক হতে হবে। তারা যদি চায় রিফর্ম দরকার, তাহলে সম্ভব। বাধা আসবে। প্রশাসনিক পর্যায়ে যারা আছেন, আমলারা, তারা সংস্কার পছন্দ করে না। পুলিশ যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।
২০০৭ সালে পুলিশের সংস্কারের জন্য দেয়া প্রস্তাবনাগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন চান সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা। বলেন, ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমে পুলিশের যদি দুর্বলতা থাকে, দেশের মানুষ তাহলে সঠিকভাবে বিচার পায় না এবং ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
/এম ই
Leave a reply