রবার্ট টেইলরের আত্মঘাতী গোলে ইন্টার মায়ামি যখন ৪-২ গোলে পিছিয়ে তখন, ম্যাচের বাকি আধ ঘন্টারও কম। ডেভিড বেকহামের ক্লাবে তখন লিওনেল মেসির প্রথম পরাজয় দেখে ফেলেছে অনেকেই। টুইট করা হচ্ছিল, মেসিরও যে অভিজ্ঞতা হওয়া বাকি! তবে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর থেকে এমএলএস’র দর্শকদের যেমন প্রতি ম্যাচ শেষেই মেসি উপহার দিয়ে যাচ্ছেন চর্মচক্ষের জন্য নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা, এবারও তা বাদ গেলো না। সংকটের মুহূর্তেই উঠে দাঁড়ালেন আর্জেন্টাইন মহানায়ক। ট্রেডমার্ক ফ্রিকিকে জাগিয়ে তুললেন মায়ামিকে। টাইব্রেকার শেষে জয়ী দলের নামও মেসির ইন্টার মায়ামি।
লিগ কাপের এই নকআউট ম্যাচে প্রত্যাবর্তনের রোমাঞ্চকর গল্প লিখে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে লিওনেল মেসির মায়ামি। টয়োটা স্টেডিয়ামে এফসি ডালাসের বিপক্ষে পেনাল্টিতে ৫-৩ ব্যবধানে জিতেছে তার দল। এর আগে রোলার কোস্টার রাইডের রূপ নেয়া ম্যাচে নির্ধারিত সময়ের খেলা ৪-৪ গোলে ড্র ছিল। এই ৮ গোলের ম্যাচে প্রথম ও শেষ- দুইটি গোল এসেছে লিওনেল মেসির পা থেকে। সেগুলোও মেসির শাশ্বত গোল। প্রথম গোল আপনাকে ভাসাতে পারে নস্টালজিয়ায়। বামপ্রান্ত থেকে জর্ডি আলবার ক্রস থেকে মেসির শট যখন খুঁজে নেয় গোলপোস্টের আশ্রয়, স্মৃতি প্রতারণা না করলে দর্শক তখন উড়ে যাবে ২০১৭ সালের সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ফুটবলীয় মহাকাব্যে। যে ম্যাচকে ধরা হয় এল ক্লাসিকোর ইতিহাসে অন্যতম সেরা হিসেবে। উদযাপনে মেসি প্রদর্শন করবেন তার বিখ্যাত জার্সি; আর হতাশায় লুটিয়ে পড়বেন মার্সেলো। রাগ ঝাড়বেন সিআরসেভেন।
ডালাসের টয়োটা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি ছিল ইন্টার মায়ামির জার্সিতে মেসির প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচ। ম্যাচের শুরুতেই ৬ মিনিটে দলকে লিড এনে দেন মেসি। আর সেটাই ছিল ইন্টার মায়ামিতে আলবা-মেসির যুগলবন্দিতে প্রথম গোল। এই লিড নিয়ে বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি ইন্টার। প্রথমার্ধের ৩৭ মিনিটে ফাকুন্দো কুইনোন এবং ৪৫ মিনিটে নের্নাড কামুঙ্গোর গোলে এফসি ডালাস ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের ৬৩তম মিনিটে অ্যালান ভ্যালাস্কোর গোলে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ডালাস। ঠিক তার দুই মিনিট পর মায়ামিকে খেলায় ফিরিয়ে আনেন বেনজামিন ক্রামাশচি। তার গোলে ব্যবধান কমে ৩-২ করে মায়ামি। কিন্তু ৬৮ মিনিটে রবার্ট টেইলরের আত্মঘাতী গোলে আবারও ধাক্কা খায় মায়ামি, আর ৪-২ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ডালাস। কিন্তু আত্মঘাতী গোলের পালা তখনও শেষ হয়নি। ৮০ মিনিটে মারকো ফারফানের আত্মঘাতী গোলে ব্যবধান আবারও কমিয়ে ৪-৩ করে মায়ামি। এই গোলকে অনেকটাই মেসির অ্যাসিস্ট হিসেবেও ধরা যায়। মায়ামি অধিনায়কের মাপা ফ্রি কিক ক্লিয়ার করতে গিয়েই নিজেদের জালে বল জড়ান ফারফান।
তবে তাতেও সব ঠিক হয়ে যায়নি। শেষ দশ মিনিটের খেলা যখন এগিয়ে যাচ্ছিল মায়ামির হয়ে মেসির প্রথম পরাজয়ের চিত্রনাট্য লেখার দিকে, তখন মাঠে সমর্থকদের ভরসার নামও সেই এলএমটেন। ৮৫তম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক ফ্রি কিকে গোল করে ম্যাচ সমতা ফেরান বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা। শেষ দিকে ট্রাইব্রেকারে ৫-৩ ব্যবধানে ডালাসকে হারিয়ে লিগস কাপের শেষ ষোলো নিশ্চিত করে ইন্টার মিয়ামি। ডালাসের মানব দেয়াল কিংবা গোলরক্ষক- লাফিয়ে উঠেও স্রেফ দর্শক বনে গেছেন তারা মেসি-ম্যাজিকের ভোজবাজিতে! ধারাভাষ্যকাররা তখন ব্যস্ত বিশেষণ অন্বেষণে। আর ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে ইন্টার মায়ামিকে তখন টাইব্রেকারে নিয়ে গেছেন মেসি।
টাইব্রেকারে প্রথম শটটি নেন এলএমটেন। গোলকিপারকে বিভ্রান্ত করে বল পাঠান জালে। মায়ামি গোল পায় পরের ৪ শটের প্রতিটিতেই। ডালাস প্রথম ৪ শটের একটি থেকে গোল করতে না পারায় পঞ্চম শটের আর দরকার হয়নি। শেষ আটে মেসিদের প্রতিপক্ষ হবে হিউস্টন ডায়নামো ও শার্লট এফসি ম্যাচের জয়ী দল। সেই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ১১ আগস্ট।
আরও পড়ুন: ‘অশেষ অর্থের’ হাতছানি উপেক্ষা করে ‘ফুটবলের চিত্র পাল্টানোর সুযোগ’ কেন বাছলেন মেসি
/এম ই
Leave a reply