তিক্ত সম্পর্কের মধ্যেই ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের জটিল চুক্তি নিয়ে চর্চা চলছে বিশ্বজুড়ে। পাঁচ মার্কিন বন্দিকে মুক্তির বিনিময়ে ছাড়তে হবে তেহরানের জব্দকৃত ৬০০ কোটি ডলার। একে ‘হোস্টেজ ডিপ্লোমেসি’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন অনেকে। বিশ্লেষকদের চর্চায় উঠে আসছে ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তিতে ফেরার ইস্যুটি। এটিকে ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনের আগে নতুন কূটনীতি হিসেবেও দেখছেন অনেকে। অবশ্য, বাইডেন প্রশাসন সাফ জানিয়েছে, ইরান ইস্যুতে তারা অবস্থান পাল্টাবে না। এই চুক্তিকে বিরল কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন কূটনীতিকরা। খবর বিবিসির।
গত বৃহস্পতিবার ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ বন্দি বিনিময় ইস্যুতে সমঝোতা হয়। সেখানে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ৫ বন্দির বিনিময়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় আটকে থাকা তেহরানের ৬০০ কোটি ডলার ছাড় করাতে হবে, যা আসবে কাতার সেন্ট্রাল ব্যাংকে। তবে শর্ত দেয়া হয়েছে, খাবার ও ওষুধ কেনার মতো মানবিক কাজে বিপুল অংকের অর্থ খরচ করতে হবে তেহরানকে।
বিশ্লেষকদের দাবি, ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে ফেরার প্রথম ধাপ হলো এই কূটনীতি। আবার সৌদি-ইরান বরফ গলায় এটা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ বলেও মনে করছেন অনেকে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টিমজন সেন্টারের রাজনৈতিক বিশ্লেষক বারবারা স্লাভিন বলেন, বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইরান শুধু বিবাদ কমাতে চায়নি। তাদের শর্ত স্পষ্টভাবে চুক্তিপত্রে উল্লেখ রয়েছে। গত কয়েক বছরের নিষেধাজ্ঞায় আর করোনা মহামারিতে দেশটির যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, কৌশলে সেটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে তেহরান। ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনের আগেই জব্দকৃত সম্পদ ছাড় করাতে চাইছে দেশটি।
এদিকে, ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফুয়াদ ইজাদি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উসকানিতে ৭০ বছর আগে যে অভ্যুত্থান হয়েছিল, সেটির পুনরাবৃত্তি চায় না ইরান। সে কারণেই, সন্দেহভাজন মার্কিনিদের বন্দি করা হয়েছে। এর পেছনে কূটনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে জাতিসংঘের নীতিমালা লংঘন করছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সেটি নিয়ে মার্কিন মিত্রদের মাথাব্যাথা নেই।
অবশ্য বন্দি বিনিময়ের ফলে দু’দেশের দীর্ঘদিনের তিক্ত সম্পর্ক রাতারাতি উন্নয়নের কোনো সম্ভাবনা নেই উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, ইরানের ব্যাপারে মার্কিন অবস্থানের কোনো পরিবর্তন আসবে না। আমরা প্রতিরোধ এবং কূটনৈতিক চাপের মতো কৌশল অনুসরণ করবো। ইরানকে কখনওই পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ হতে দেয়া যাবে না। মানবাধিকার লঙ্ঘন, হয়রানি, আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা ছড়ানো, সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়া, রাশিয়াকে যু্দ্ধে ড্রোন সহযোগিতা দেয়ার মতো ইস্যুগুলোয় তাদের জবাবদিহি করা হবে।
প্রসঙ্গত, তেহরানের ইভিন কারাগারে বন্দি ছিলেন ৫ দ্বৈত নাগরিক। বর্তমানে তারা রয়েছেন হাউস অ্যারেস্ট। সিয়ামাক নামাজি, ইমাদ শারগি ও মোরাদ তাহবাজের নাম জানানো হলেও পরিবারের আপত্তির কারণে বাকি দুজনের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করে ইরান। ১০ বছরের কারাদণ্ড শোনানো হয় তাদের।
এসজেড/
Leave a reply