আল-আমিন হক অহন:
প্রতিদিন রাত তিন চারটার দিকে এসএমএস ও অনলাইনে ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেয়া হয় ডিমের দাম। ভোর থেকে একযোগে সেই দামই কার্যকর হয় দেশজুড়ে। ইচ্ছেমতো দর বসিয়ে ক্রেতার পকেট কেটে নেয়া হয় কোটি কোটি টাকা। গায়েবি এই এসএমসের মূল উৎস জানা থাকলেও মুখ খুলতে চান না কেউ।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার পাইকারী ব্যবসায়ী আহাদ। তার মুঠোফোনে প্রতিদিন ডিমের দাম জানিয়ে দেয়া হয় এসএমএস। আহাদকে ডিমের দাম ঠিক করে এসএমএস দেন কে? ফোন নম্বরের সূত্র ধরে পাওয়া যায় রুহুল আমিনের নাম। নিজের আড়তেই তার হদিস দিতে গড়িমসি সবার।
অবশেষে পাওয়া যায় তাকে। জানতে চাওয়া হয়, এই গায়েবি এসএমএসে ডিমের মূল্য কীভাবে নির্ধারণ করেন তিনি? ডিমের আড়তদার রুহুল বলেন, আমি যে দামে কিনি তার থেকে লাভ রেখে এই এসএমএস দেই। স্বীকার না করলেও বোঝা গেল, তাকে ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দেন অন্য কেউ।
তবে রুহুল আমিন যার কাছে থেকে ডিম কেনেন কিশোরগঞ্জের সেই হাবিব বললেন, কত দামে ডিম বিক্রি করতে পারবেন, তা ঢাকা থেকেই নির্ধারণ হয়। পরে সেই দামে লাভ রেখে খামারিদের কাছ থেকে ডিম কিনে বিক্রি করেন তিনি। হাবিব বলেন, আমি আগে জেনে নেই, রেট কত হবে। তারপর কিনি।
ঢাকায় কারা ঠিক করেন ডিমের দাম, কারা দেন গায়েবি এসএমএস? কমবেশি সবারই অভিযোগ করপোরেট সিন্ডিকেটই এর মূল হোতা। বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, করপোরেট গ্রুপ যে এসএমএসটা দেয়, সেটাই ফলো করে সবাই। একশ পারসেন্ট বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এই সিন্ডিকেট।
এই অভিযোগ খতিয়ে দেখা যায়, গত কয়েকদিন বিক্রেতাদের ফোনে ডিমের যে দামের এসএমএস দেয়া হয়েছে, তা করপোরেট মালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’এর ধরে দেয়া দামের সাথে মিলে যায়। অভিযোগ আছে, বিপিআইএ’র পেজে করপোরেট সিন্ডিকেটের হয়ে গায়েবি এসএমএস দেয় ইউনাইটেড অ্যাগ্রো।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ তৎপর হওয়ার পর কয়েক দিন ধরে বন্ধ আছে গায়েবি এসএমএস। মিরপুরে সংগঠনটির মাসিক ৫০ হাজার টাকায় ভাড়া নেয়া অফিসে গিয়েও পাওয়া গেলো না কাউকে।
সংগঠনটির মহাসচিব ও ইউনাইটেড অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সের স্বত্বাধিকারী খন্দকার মুহাম্মদ মহসিনের দাবি, সিন্ডিকেট করে নয়, চাহিদা অনুসারে প্রতিদিনের বাজার-মূল্য প্রকাশ করেন তারা। তার বক্তব্য, কী দামে বিক্রি হয়েছে, এটা দেয়া হয়। আমরা কোনো মূল্য নির্ধারণ করি না।
করপোরেট মালিকরা বলছেন, তারা শুধু ডিম উৎপাদন করেন। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা, না করা সরকারের কাজ। পিপল পল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ১১ টাকা ৪০ পয়সায় ডিম বিক্রি করার পর ডিমের দাম কেন ১৪ টাকা হয়? কারা করে এই কারসাজি? কিন্তু সবসময় অভিযোগ ওঠে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর।
সাধারণ মানুষ মনে করে, কিছুদিন পরপর ডিমের বাজারে কারসাজি করে ‘গরিবের আমিষ’র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও সরকার শক্ত পদক্ষেপ নেয় না বলেই বাজারের এই অবস্থা।
/এএম
ভিডিও প্রতিবেদনটি দেখুন:
Leave a reply