এমটিএফই অ্যাপের ভুয়া ট্রেডিংয়ে দেশ থেকে পাচার ১০ হাজার কোটি টাকা!

|

মাসুদুজ্জামান রবিন:

কোনো পরিশ্রম করতে হবে না। কিছু টাকা বিনিয়োগ করলেই হওয়া যাবে প্রতিষ্ঠানের সিইও। আর প্রতিদিন দ্বিগুণ-তিনগুণ মুনাফা করে, রাতারাতি বনে যাওয়া যাবে কোটিপতি। এজন্য বিদেশি অ্যাপে ট্রেড করলেই মিলবে ডলার। এ আশায় লাখ লাখ টাকা লগ্নি করে প্রতারিত হয়েছে দেশের হাজার হাজার তরুণ, বেকার। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) থেকে তাদের অ্যাকাউন্ট শূন্য। সাড়া মিলছে না ওই ট্রেডিং অ্যাপ থেকেও। ধারণা করা হচ্ছে, এমটিএফই দেশ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। বিষয়টি অনুসন্ধান করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ভুক্তভোগীরা জানান, কেউ স্বর্ণ বিক্রি করেছে, কেউ জমি বন্ধক রেখেছে, কেউ গরু-ছাগল বিক্রি করেছে; এভাবেই টাকা সংগ্রহ করেছে অনেকে। তারা প্রতারিত হয়েছে। বিনিয়োগ করা অর্থ হারিয়ে তারা দিশেহারা।

ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৮ থেকে ৪০ এর মধ্যে। তারা বলছেন, গত কয়েক মাসে ব্যাপক প্রসার হয় ‘এমটিএফই’ নামের অ্যাপটির। এতে অ্যাকাউন্ট আছে এমন কারও রেফারেন্সের মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারী অন্তর্ভুক্ত করা হয়। হিসাব খুলতে প্রয়োজন হয় ন্যূনতম চার হাজার টাকা। বাইন্যান্সের মতো আন্তর্জাতিক এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিনিয়োগের টাকা রূপান্তরিত হয় ভার্চুয়াল ডলার বা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে। সেই ডলার স্থানান্তর করা হতো এমটিএফই’র অ্যাকাউন্টে।

বিনিয়োগকারীরা এমটিএফই অ্যাপে নিজেদের অর্থের পরিমাণ দেখতে পেতেন ডলারে। দেখতে পেতেন লেনদেনও। তবে, এই ট্রেডে সরাসরি অংশ নিতে পারতেন না। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত এআই রোবটের মাধ্যমে চলতো ট্রেডিং। এই মুনাফা যুক্ত হতো অ্যাকাউন্টে। যত বেশি টাকা বিনিয়োগ, মুনাফাও তত বেশি। এর সাথে আছে অন্যজনকে রেফার করে বাড়তি আয়ের সুযোগ।

মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করে বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করা হতো। অনলাইনভিত্তিক এই ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের দেশে কোনো অফিস বা কার্যালয় নেই। তবে দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটির ৫ শতাধিক সিইও। তারা নিজস্ব অফিস খুলে নতুন নতুন বিনিয়োগকারী সংগ্রহ করতেন। এখন সে সব অফিসেও তালা ঝুলছে।

সিইওদের অফিসে ঝুলছে তালা।

একজন ভুক্তভোগী বলেন, তার অ্যাকাউন্টে ৩ হাজার ডলার ছিল। এখন কিছুই নেই। উল্টো দেখাচ্ছে, তার নাকি ১৫শ’ ডলার ঋণ! আইনের সাহায্য নেয়ার কথাও জানান কেউ কেউ। দ্রুত প্রতারকদের ধরা হোক, এটাই তাদের চাওয়া। বিনিয়োগকৃত টাকাও যাতে তারা ফিরে পান, সেই উদ্যোগও চান ভুক্তভোগীরা।

দেশজুড়ে আলোচনা শুরুর পর প্রতারণার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়্যাল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বৈধ নয় তাদের সাথে লেনদেন করলে আইনি প্রতিকার থাকবে না। অতএব, আমাদের বিএফআইইউ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী- সবাই চেষ্টা করছে যাতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনা যায়।

ধারণা করা হচ্ছে, এমটিএফই অ্যাপে বিনিয়োগ করা অর্থ বিদেশে সরিয়ে ফেলেছে একটি চক্র। বিপুল পরিমাণ টাকা কীভাবে ডলার বা ক্রিপ্টোতে পরিণত হলো তা খতিয়ে দেখার দাবি ভুক্তভোগীদের।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply