সৌদি সীমান্তরক্ষীদের হাতে নিহত শতাধিক অভিবাসী: হিউম্যান রাইট ওয়াচ

|

ইয়েমেন সীমান্তে মরছে অভিবাসী। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি সীমান্তরক্ষীদের বিরুদ্ধে ইয়েমেন সীমান্তে অভিবাসীদের ওপর গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত এক বছরে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইয়েমেন হয়ে সৌদি আরবে আসা শত শত মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে সৌদি সীমান্তরক্ষীরা। সৌদি আরব অবশ্য পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

সোমবার (২১ আগস্ট) ‘তারা আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়েছে’ শিরোনামে নতুন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। স্যাটেলাইটের ছবি ও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। এতে বলা হয়, সৌদি আরবের সঙ্গে ইয়েমেনের দুর্গম উত্তর সীমান্তে অভিবাসীদের গুলি করে হত্যা করেছে সৌদি পুলিশ ও সেনারা। কখনও কখনও বিস্ফোরক অস্ত্রও ব্যবহার করেছে তারা।

অভিবাসীদের বক্তব্য
অভিবাসীরা জানিয়েছে, গুলির আঘাতে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং মরদেহ রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ করা অভিবাসীরাও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করেছে। তারা জানিয়েছে, রাতের আঁধারে কাজের সন্ধানে সীমান্ত অতিক্রমের সময় তাদের ওপর গুলি করা হয়। অভিবাসী বা অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে বেশির ভাগ রয়েছে ইথিওপিয়ান নাগরিক (নারী ও শিশুসহ), যারা ইয়েমেন পাড়ি দিয়ে সৌদি আরবে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল।

ইথিওপিয়ার নাগরিক মুস্তাফা সৌফিয়া মোহাম্মদ। ছবি: বিবিসি।

ইথিওপিয়ার নাগরিক ২১ বছর বয়সী মুস্তাফা সৌফিয়া মোহাম্মদ বিবিসিকে বলেন, তারা আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে সীমান্ত পেরিয়ে লুকিয়ে ঢোকার সময় তাদের ৪৫ জনের মধ্যে কয়েকজন সৌদি সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে নিহত হয় বলে জানান এই যুবক। আরেক ইথিওপিয়ান অভিবাসী বলেন, তারা আমাদের কয়েকজনকে হত্যা করেছে। যারা বেঁচে গেছে, তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেছে। নিহতদের মৃতদেহ মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। একজন ইয়েমেনি তরুণীর বক্তব্য, তার এই যাত্রায় প্রায় ২৫০০ ডলারের মতো খরচ হয়েছে মুক্তিপণ ও ঘুষ দিতে গিয়ে। তবু রক্ষে হয়নি। একটি বুলেট তার হাতের সবগুলো আঙুল কেড়ে নেয়।

সোর্স: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ছবি: বিবিসি

দেশান্তর হওয়ার পথ
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার মতে, বছরে দুই লাখের বেশি মানুষ ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ থেকে সমুদ্রপথে ইয়েমেনে পাড়ি দেয়। এরপর সেখান থেকে সৌদি আরবে ঢোকার চেষ্টা করে তারা। এই সমুদ্রপথ পাড়ি দেয়া যথেষ্ট বিপজ্জনক। গত সপ্তাহেও জিবুতির উপকূলে জাহাজডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছে ২৪ জনেরও বেশি অভিবাসী। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই যাত্রায় অনেকেই কারাভোগ বা মারধরের শিকার হয়েছেন।

অন্যদিকে, পথের ধারে মারা যাওয়া মানুষের কবরে সয়লাব ইয়েমেনের সীমান্ত বরাবর পথগুলো। দু’বছর পূর্বে রাজধানী সানার একটি আটক কেন্দ্রে আগুন লেগে নিহত হয়েছিল বহু অভিবাসী। উত্তর ইয়েমেনের বেশিরভাগ এলাকা হুথি বিদ্রোহীদের দ্বারা পরিচালিত।

সৌদি আরবের প্রতিক্রিয়া
অভিযোগগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নেয়ার কথা বলেছে সৌদি সরকার। তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন অনুযায়ী এটিকে ‘গণহত্যা’ বা ‘পরিকল্পিত হত্যা’ বলতে নারাজ তারা। তাদের দাবি, হত্যাকাণ্ডগুলো পরিকল্পিত বা বড় পরিসরে ছিল না। রিয়াদ জানায়, অভিযোগগুলো সীমিত তথ্যের ভিত্তিতে আনা হয়েছে। এগুলো নিশ্চিত করার জন্য কোনো তথ্য বা প্রমাণ খুঁজে পায়নি সৌদি কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু গত মাসে বেঁচে যাওয়া অভিবাসীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সীমান্তে হত্যার আরও অভিযোগ প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাপী গবেষণা নেটওয়ার্ক সংস্থা ‘মিক্সড মাইগ্রেশন সেন্টার’।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply