স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
সাভারে হত্যাকাণ্ডের পর মৃতদেহের পাশে ‘ইসলামের সৈনিক’ এর চিরকুট রহস্য উদ্ঘাটন এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করেছে র্যাব।
জানা গেছে, সাবেক স্কুল শিক্ষক গোলাম কিবরিয়াকে হত্যা করে সাড়ে ৬ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে চিরকুট লিখে রেখে যায় তারা। চিরকুটে লেখা ছিল, ‘এই ব্যক্তি সমকামী করে পুলিশ ভাই, আমরা তাই মেরে ফেলেছি। ভাই ও অবৈধ কাজ করে, আমরা ইসলামের সৈনিক।’
এরইমধ্যে এ হত্যারহস্য উদ্ঘাটন ও এর সাথে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৬ ও র্যাব-১৩ এবং র্যাব-৪ এর যৌথ দল। গ্রেফতারকৃতরা হলো- যশোরের ইমন খান (২৩), ঝিনাইদহের ছাদেক গাজী (২২) ও রংপুরের সাগর (২২)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, গত ২০ আগস্ট সাভারের রেডিও কলোনির জামসিং রোডের নিজ বাসভবনে লুঙ্গী দিয়ে হাত-পা বাধা ও গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় সাবেক স্কুল শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া (৪৩) এর লাশ পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধারের পর মরদেহের পাশে একটি চিরকুটও পাওয়া যায়। চিরকুটে লেখা ছিল, ‘এই ব্যক্তি সমকামী করে পুলিশ ভাই, আমরা তাই মেরে ফেলেছি। ভাই ও অবৈধ কাজ করে, আমরা ইসলামের সৈনিক।’
তিনি আরও জানান, সাভার রেডিও কলোনি মডেল স্কুলের সাবেক শিক্ষক নিহত গোলাম কিবরিয়া ওই বাসায় একা থাকতেন এবং সাভারের বিভিন্ন স্থানে টিউশনি করাতেন। পাশাপাশি জমি কেনাবেচার ব্যবসাও করতেন।
লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন, হত্যার রহস্য উদঘাটন ও অপরাধীদেরকে ধরতে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে র্যাব-৪। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৪, র্যাব-৬ ও র্যাব-১৩ এর যৌথ দল গোলাম কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও এ হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের উদ্বৃতি দিয়ে র্যাব জানিয়েছে, ২০১৯ সালে রিকশা চালানোর সময় ভুক্তভোগী গোলাম কিবরিয়ার সাথে পরিচয় হয় পেশায় অটোরিকশা চালক আসামি সাগরের। পরে তাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ায় নিয়মিত অডিও ও ভিডিওকলে কথা বলতেন তারা। ভিডিওকলে কথা বলার এক পর্যায়ে কিবরিয়ার আলমারিতে জমি কেনাবেচার বিপুল পরিমাণ টাকা দেখতে পায় সাগর। সে টাকার লোভেই তার সাথে আরও সুসম্পর্ক গড়ে তোলে সাগর। এক পর্যায়ে সাগর তার বন্ধু আরেক আসামি ইমনকে বিষয়টি জানায় এবং দুজন মিলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনা মোতাবেক সাগর ফোনেই ইমনের সাথে কিবরিয়ার পরিচয় করিয়ে দেয়। এবং এক পর্যায়ে ইমনের সাথেও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে কিবরিয়ার।
র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের তিনদিন আগে ভুক্তভোগীর সাথে ভিডিওকলে কথা বলার এক পর্যায়ে জমি কেনাবেচার বিপুল পরিমাণ টাকা দেখতে পায় ইমন। তখন ইমন তার আরেক বন্ধু ছাদেককে ভুক্তভোগীর টাকার ব্যাপারে জানায়।
এরপর, ঘটনার দিন গত ২০ আগস্ট রাত ৮টার দিকে আসামি ইমন ও ছাদেক পরিকল্পনা করে কিবরিয়ার বাড়িতে যায়। আর, সাগর অবস্থান নেয় স্ট্যান্ডে। এরমধ্যেই বাসায় ইমন ও সাদেকসহ হালকা নাস্তা করে তাদের সাথে কথা বলতে থাকেন কিবরিয়া। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে কিবরিয়ার গলা চেপে ধরে ছাদেক। আর, মুখ চেপে ধরে কৌশলে লুঙ্গী দিয়ে হাত-পা বেঁধে ও গলায় গামছা পেঁচিয়ে কিবরিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করে ইমন। এরপর, একটি সাদা কাগজে চিরকুট লিখে মৃতদেহের পাশে ফেলে রাখে ছাদেক। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর ভিকটিমের বিছানার নিচ থেকে আলমারির চাবি নিয়ে আলমারি থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন, কয়েন, ৪ প্যাকেট সিগ্যারেট নিয়ে সাগরের অটোরিকশাযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা। এরপর, সাগরকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা ইমন ও সাদেক ভাগ করে নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরের দিন সকালে আত্মগোপনের উদ্দ্যেশে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায় কিবরিয়ার হত্যাকারীরা। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৬, র্যাব-১৩ ও র্যাব-৪ এর যৌথ দল নিজ নিজ এলাকা থেকে আসামিদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাভার মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
/এসএইচ
Leave a reply