জাতীয় বীর থেকে বেঈমান আখ্যা, প্রিগোঝিনের উত্থান-পতন যেন রূপকথার গল্প

|

রুশ প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে অনুগত সহচর থেকে সবচেয়ে বড় শত্রুতে পরিণত হওয়া, কিংবা জাতীয় বীর থেকে বেঈমান আখ্যা পাওয়া, ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনের উত্থান-পতনের ঘটনা হার মানায় রূপকথার গল্পকেও। একসময় যিনি ছিলেন মস্কোর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, তার পতন হয় রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার পরই। তখনই নিশ্চিত হয়ে যায়, খুবই কঠিন পরিণতি বরণ করতে হবে এই মার্সেনারি নেতাকে। খবর বিবিসির।

গত এক দশকের বেশি সময় ধরেই মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রাশিয়ার ছায়া সামরিক বাহিনী হিসেবে কাজ করে আসছে মার্সেনারি সংগঠন ওয়াগনার গ্রুপ। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া দখলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য পুতিন প্রশাসনের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায় গ্রুপটির। মূলত তখন থেকেই আলোচনায় আসে ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনের নেতৃত্বাধীন ভাড়াটে সেনাদের দল ওয়াগনার গ্রুপ।

৮০’র দশকে চুরি এবং ডাকাতির অভিযোগে কয়েক দফায় ১৩ বছর কারাদণ্ড হয় প্রিগোঝিনের। মুক্তির পর ফাস্টফুডের ব্যবসা করতেন প্রিগোঝিন। সেখান থেকে শুরু করেন রেস্তোরাঁ ব্যবসা। মূলত তখন থেকেই পরিচয় তৎকালীন কেজিবি কর্মকর্তা ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে। সেই পরিচয়কে পুঁজি করে প্রসার হয় ব্যবসার। পরিচিতি পান পুতিনের শেফ হিসেবে, হয়ে ওঠেন ধনকুবের।

ধারণা করা হয়, ওই অর্থ দিয়েই ওয়াগনার বাহিনী গড়ে তোলেন প্রিগোঝিন। পরবর্তীতে তিনি নিজেই বাহিনীর শীর্ষ নির্বাহী ও কমান্ডার পদে যুক্ত হন। প্রায় ১০ বছর আগে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে হামলার মাধ্যমে রীতিমতো জাতীয় বীরে পরিণত হন প্রিগোঝিন। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানে, রুশ সামরিক বাহিনীর অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে ভাড়াটে সেনাদের দল ওয়াগনার। সদস্য সংখ্যা ছাড়ায় ৫০ হাজারের বেশি।

তবে এর মাঝে বহুবারই, রুশ সেনাবাহিনীর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলেন তিনি। তার দাবি, প্রতিশ্রুতি দিয়েও পর্যাপ্ত অস্ত্র-গোলাবারুদ দেয়া হয়নি তার দলকে। এরপর থেকেই ক্রেমলিনের সাথে ওয়াগনার গ্রুপের সম্পর্কে ফাটলের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

সবশেষ জুলাইয়ে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন প্রিগোঝিন। এসবের মাধ্যমেই আসলে গড়ে ওঠে ওয়াগনার নেতার কঠিন পরিণতির প্রেক্ষাপট। বুধবার (২৩ আগস্ট) পশ্চিম রাশিয়ার ভের অঞ্চলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন। বিমানে থাকা অপর ৯ আরোহীও নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৪ জনের মরদেহ।

এর আগে, ওয়াগনার গ্রুপের সাথে সম্পর্কিত একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলা হয়, ওয়াগনার প্রধানকে বহনকারী বিমানটি আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী কর্তৃক বিধ্বস্ত করা হয়েছে।

নিয়মিত বাহিনীর মতো পেশাদার এবং গোছানো মার্সেনারি দল ওয়াগনার। ফলে প্রিগোঝিনের অনুপস্থিতিতে ওয়াগনারে নতুন নেতৃত্ব বসাবে মস্কো। যিনি হবেন প্রিগোঝিনের চেয়েও বেশি পুতিন বিশ্বস্ত এবং ঘনিষ্ঠ।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply